চরম ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। অনেকে দাম কমিয়ে লোকসানে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে একের পর এক বড় দরপতনের ঘটনা ঘটছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা।
চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেনের ঘটনা ঘটার পর সোমবার লেনদেনের পরিমাণ আরও কমে গেছে। ফলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বেড়েই চলেছে।
লেনদেন খরার পাশাপাশি এদিন সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯০ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এর মধ্যে দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা ছিল না লেনদেনের বেশিরভাগ সময়।
এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের ১০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০ পয়েন্টের ওপর পড়ে যায়। আর লেনদেনের সময় ৩০ মিনিট পার না হতেই ধসে রূপ নেয় শেয়ারবাজার।
লেনদেনের প্রথম আধঘণ্টার মধ্যেই অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। লেনদেনের শুরুতে এমন পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়।
ক্রেতা না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম দিনের সর্বনিম্ন দামে বিক্রির আদেশ আসতে থাকে। কিন্তু এ দামেও হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী।
লেনদেনের শেষদিকে এসে ১৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দিনের সর্বনিম্ন দামে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করতে চাইলেও তারা ক্রেতা খুঁজে পাননি। দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা না থাকায় লেনদেনও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৯০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিলের পর ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেনের ঘটনা ঘটলো।
এমন ক্রেতা সংকটের বাজারে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে মাত্র ১৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৭টির। আর ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪৮২ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৪০৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বাজারটিতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে জেএমআই হাসপাতালের শেয়ার। কোম্পানিটির ৭৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১১ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কাট্টালী টেক্সটাইল।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, বিকন ফার্মা, ডরিন পাওয়ার, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৭২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৬৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২২৫টির এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।