মামুনার রশিদ মিঠু,নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি : নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে গনধর্ষণের অভিযোগে চারজনের নামে মামলা হয়েছে। এঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে। তবে ঘটনাটি পরিকল্পিত এবং আসামিদের ফাসানো হয়েছে বলে দাবী স্বজনদের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন মেয়েটি নিখোজ হওয়ার পর থানায় জিডি হয়েছিল পরে মেয়েটি উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় তবে সে সময় ধর্ষণের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবী স্বজনদের। মামলা সুত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর সুরিপাড়া গ্রামের ওই তরুণীকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গত ( ২৩ এপ্রিল) খালার বাড়িতে ইফতার শেষে ফেরার পথে একটি দোকানের সামনে থেকে স্থানীয় যুবক জীবন, মানিক ও রশিদুল তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে চড়াইখোলা এলাকায় প্রথমে ভুট্টাক্ষেতে পালাক্রমে ধর্ষণের পর একটি গভীর নলকূপের ঘরে ৫ দিন আটকে রেখে আবারও পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। তারপর ২৭ এপ্রিল আরেকজনের কাছে টাকার বিনিময়ে তুলে দেয় অভিযুক্তরা। ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে জানালে তাকে এবং তার পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় ওই তিন যুবক। মেয়ে নিখোজের পর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছিলেন তরুণীর বাবা। পরে বাড়িওয়ালা মাহাবুলের সহযোগিতায় রংপুর থেকে গত রোববার ৮মে স্থানীয় মেম্বার খায়রুলের জিম্মায় বাড়িতে যায় মেয়েটি। যাওয়ার পথেও অভিযুক্তদের পরিবার তাকে প্রকৃত ঘটনা না বলার জন্য চাপ দেয় বলেও অভিযাগে উল্লেখ করেন মেয়েটির বাবা। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে কিশোরী পুরো ঘটনা খুলে বলে। পরে ওই তিন যুবক ও ধর্ষণে সহযোগী এক নারীকে আসামি করে থানায় ধর্ষন মামলা দায়ের করেন মেয়েটির বাবা। জানা গেছে, অভিযুক্তদের তিনজনই বিবাহিত। তার মধ্যে একই এলাকার জীবন ও মানিক ট্রলিচালক এবং রশিদুল তার স্ত্রী সায়তারাকে নিয়ে স্থানীয় কাকিলাপুর দাখিল মাদরাসার সামনে ঝালমুড়ি বিক্রি করে।এ ঘটনায় সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে কিশোরীর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। এবং এ বিষয়ে প্রতিবেশি কেউই কথা বলতেও রাজি হন নি। জানা গেছে ধর্ষণের স্বীকার মেয়েটি বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাস্পাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মানিক হোসেনের মা রানী বেগম ছেলেকে নির্দোষ দাবী করে বলেন, আমার ছেলে কাজ করি খায়। স্কুলে এক সাথে পরছিল। হয়ত পরিচয় ছিল। ছেলের আমার বিয়েও হয়েছে। মেয়ের অন্য স্থানে বিয়ে হয়েছিল। কয়দিন আগে শুনি মেয়ে নিখোজ। কিন্তু তখন তো আমার ছেলে বাড়িতে ছিল। সবাই দেখছে। পরে মেম্বার চেয়ারম্যান কোথায় থাকি মেয়েটা আনি ইউনিয়ন পরিষদে সালিশের মাধ্যমে তার বাবার কাছে তুলে দিলো।
সালিশে মানিক ও জীবন জরিত নেই বলে জানিয়েছে মেয়েটি, ছেলেকে ফাসানো হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। একি দাবী অপর আসামিদের স্বজনদের। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটনের আহবান জানান তারা।স্থানীয় বাদিন্দা মেসবাউল হক বলে, সালিশে ওই কিশোরী একা ঢাকায় গেছে, কোন ছেলে সাথে ছিলনা বলেছে আমরা সবাই শুনেছি।ইউপি সদস্য খাইরুল ইসলাম বলেন, ওই মেয়ে হারিয়ে যাওয়ার পর তার বাবা থানায় অভিযোগ করে। থানার এসআই আমাকে ডেকে মেয়েটাকে খুঁজতে বলে। তবে আমি এবিষয়ে কোন খোজ নেইনি। পরে মেয়েটি নিজেই আমাকে কল করে বলে সে ঢাকায় আছে। তবে পরে জানা যায় সে রংপুর শুটিবাড়িতে আছে। সেখান থেকে আরো কয়েকজন মিলে তাকে নিয়ে আসি।কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সায়েম চৌধুরী বলেন, কয়েকদিন আগে মেয়েটা নিখোজ হয়। থানায় অভিযোগও ছিল। পরবর্তীতে মেয়েটাকে রংপুরে পাওয়া যায়। ইউপি মেম্বার আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। তখন আমরা পরিষদে হাজির করে বিচার করি, মেয়ের বাবার হাতে তুলে দেই।মেয়েটি ঢাকায় একা গিয়েছিল বললেও বিচারে ধর্ষণের বিষয়ে কোন কিছুই জানায়নি মেয়েটি ও তার পরিবার। পরবর্তীতে কি ঘটনা ঘটছে আমি জানি না। না জেনে মন্তব্যও করা যাবে না, তদন্ত করলে সঠিক জিনিসটা বের হবে আশা করি।কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাজিব কুমার দাস জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। একজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।