আহসান হাবীব লায়েক, জকিগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি:সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কোথাও পানি কমলেও আবার কোথাও বেড়েছে। সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জের বারোঠাকুরী অমলশীদ এলাকায় বরাক মোহনায় গতকাল বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ভাঙনের ঘটনায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। প্রবল বেগে পানি ঢুকে জকিগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে নগরীতে ধীরগতিতে পানি কমতে শুরু করেছে। দুর্ভোগে বেড়েছে বানভাসি মানুষের। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক জকিগঞ্জের ভাঙা ডাইক পরিদর্শন করেছেন। অন্যদিকে বন্যার কারণে সিলেটের কানাইঘাটে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ স্থগিত করা হয়েছে।স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্র রাতে ভারতের সীমান্তবর্তী বরাক নদের মোহনায় ডাইকটি ভেঙে গেছে। এরপর মুহূর্তেই জকিগঞ্জের ফিল্লাকান্দি, অমলশিদ, বারঠাকুরী, খাসিরচক, খাইরচক, বারোঘাট্টা, সোনাসারসহ বেশ কিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে জকিগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে অমলশিদ যাতায়াতের রাস্তাটিও পানিতে ডুবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে এ রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।জকিগঞ্জের বারোঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসীন মর্তুজা গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জকিগঞ্জের ত্রিগাঙের ডাইকটি পানি চাপ ভেঙে গেছে। ডাইক ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে বারোঠাকুরী, খাসিরচক, খাইরচক, বারোঘাট্টা, সোনাসার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাতেই মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হয়। ডাইক ভাঙার কারণে সুরমা-কুশিয়ারার তীরবর্তী জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট শহরে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।সিলেট সদরসহ সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির রাতে কিছুটা উন্নতি হলেও সকাল থেকে পানি কিছুটা বেড়েছে। বিকেলে আবার কমতে শুরু করে। গোইনঘাট উপজেলার বারহাল এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুর আহমেদ বলেন, রাতে পানি কিছুটা কমেছিল, সকালে আবার বেড়েছে। কানাইঘাট উপজেলা সদরের বাসিন্দা আলা উদ্দিন জানান, কিছুটা পানি কমলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। দুর্ভোগ আরো বেড়েছে বানভাসি মানুষের।জকিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পল্লব হোম দাস বলেন, ডাইকটি ভেঙে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এতে নতুন করে উপজেলার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ডাইক ভেঙে যাওয়ায় সিলেটের অন্যান্য উপজেলায়ও পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, সিলেটের প্রধান নদ নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও পানি কমার খবর পাওয়া গেছে। আশা করা যাচ্ছে ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।এদিকে, সিলেট সিটি কর্পোরেশন বৃহস্পতিবার রাতে নগর ভবনে সভা করে বন্যার্তদের তালিকা করে তাদের সহায়তার উদ্যাগ নিয়েছে। আজ শুক্রবার দিনভর সিলেট নগীরর বর্ধিত অংশসহ কবলিত এলাকায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে দেখা যায়। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানকারী নাগরিকদের খাবার সংকট, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সিসিকের ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দল কাজ করছে। জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, জকিগঞ্জের ডাইক ভাঙার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।অপরদিকে ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে- ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২২ এর প্রথম ধাপে তফসিল ঘোষিত সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলায় ২০ মে থেকে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম বন্যাজনিত কারণে স্থগিত রাখা হলো।