কেশবপুর যশোর প্রতিনিধিঃ যশোরের কেশবপুর বাসির আতঙ্ক শীর্ষ সন্ত্রাসী একাধিক মামলার আসামী জামাল শেখ কে কেশবপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে। ২৯ মে ২০২২, রোববার দুপুরে কেশবপুর শহরের ত্রিমোহিনী মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে পৌরসভার মধ্যকুল এলাকার আব্দুল গনি শেখের ছেলে। তার বিরুদ্ধে কেশবপুর থানায় অপহরন, চাঁদাবাজি ও মারপিটের ৯ টি মামলা রয়েছে।
কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বোরহান উদ্দীন জানান, গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় পাঁজিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুলের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা মাসুম বিল্লাহ ও একই এলাকার ইকরামুল হোসেনকে কেশবপুর শহরের পাইলট স্কুলের সামনে থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী একাধিক মামলার আসামী জামাল শেখের নের্তৃত্বে ৮/১০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করে। পরে ওই সন্ত্রাসীরা তার চাচাতো ভাই নাজমূলের ০১৭৪৪৯৩৫৮১২ নাম্বারে দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। খবর পেয়ে কেশবপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপহৃত দুইজনকে উদ্ধার করে। এঘটনায় অপহৃত মাসুম বিল্লাহ এর চাচাতো ভাই নাজমুল হোসাইন বাদি হয়ে মধ্যকুল গ্রামের নূর ইসলাম মোড়লের ছেলে টিটো মোড়ল ও গনি শেখের ছেলে শেখ জামাল, শামীম হোসেন, পাঁজিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের হালিম সানার ছেলে ইমরান হোসেন,মাদারডাঙ্গা গ্রামের মতিন সরদার ও মনিরামপুর উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের মশিয়ার রহমানের ছেলে বিল্লাল হোসেনের নামে কেশবপুর থানায় চাঁদাবাজির মামলা করে। এরপর থেকে জামালউদ্দীনসহ অন্য আসামীরা পলাতক জীবন যাপন করছিল।২৯ শে মে রোববার দুপুরে কেশবপুর শহরের ত্রিমোহিনী মোড় এলাকায় জামাল শেখ ঘোরাফেরা করতে থাকলে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বোরহানউদ্দীনের নের্তৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।এলাকাবাসী জানায়, কেশবপুর পৌর এলাকার একজন বিতর্কিত নেতার ছত্রছায়ায় থেকে শেখ জামাল একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। নতুন ভবন তৈরি করতে, দোকান উদ্বোধনে, জায়গা-জমি ক্রয় করলে, অবৈধভাবে জায়গা দখল করতে, কেউ নতুন ব্যবসায় নামলে, বিদেশ ফেরত প্রবাসী আসলে অথবা ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উপঢৌকনের নামে চাঁদা আদায় করছে। তাদের দাবি পূরণ না হলে হামলা, অপহরনেরও শিকার হতে হচ্ছে। এ বাহিনীর সদস্যরা কেশবপুরের বিভিন্ন এলাকায় মাছের ঘের দখল, জমি দখল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাদাবি ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করেছে। পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কের অলোক সাহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবি করে জামাল বাহিনীর সদস্যরা। চাঁদা না দেওয়ায় অলোক সাহার ছেলে অনিক সাহাকে বেধড়ক মারপিট ও ছুরিকাঘাতে আহত করে তারা। দুই ভাইয়ের বিরোধের জের ধরে পৌর শহরের মধ্যকুল এলাকার বিষ্ণুপদ সরকারের পুকুরে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার ৫/৬ কেজী ওজনের রুই, কাতলা ও ভেটকি মাছ লুট করে বলে জানান বিষ্ণু সরকার। কেশবপুর বনিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল বিশ্বাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেয়ে চাঁদা দাবি করে। চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে জামাল ও তার বাহিনীর সদস্যরা বায়সা এলাকার আবু তাহেরকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ বিষয়ে কেশবপুর থানায় মামলা হয়েছে। যার নং-০১। এ ঘটনার এক সপ্তাহ পূর্বে পৌর শহরের পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড এলাকার পায়েল এ্যালুমুনিয়ামের মালিক সাধন সাহার কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে জামাল বাহিনীর সদস্যরা । চাঁদার টাকা না দেয়ায় তাকে প্রকাশ্য দিবালকে মারপিট করে তারা । গুরুতর আহত অবস্থায় সাধন কে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কেশবপুর বাজারের হাসপাতাল রোডের মুদি ব্যবসায়ী সাহাপাড়া এলাকার অলোক সাহার ছেলে অনিক সাহা পৌরশহরের আতঙ্ক সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের হামলার শিকার হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় বাহিনী প্রধান জামালসহ আরো ৫জনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ২৯ আগস্ট কেশবপুর থানায় অনিক একটি মামলা করেন। যার নং-১৩/১২৭। আরেক ভুক্তভোগি উপজেলা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, আমরা যেখানে নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করছি, সমাজের বিভিন্ন অন্যায় নিয়ে কাজ করছি সেখানে আমাদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকারের সময় এ ধরনের আচরণ আমরা প্রত্যাশা করিনা। শীর্ষ এ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করাই কেশবপুর থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই । উল্লেখ্য, গত ১ বছরের মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ জামাল বাহিনীর তান্ডবের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে পৌর শহরের সাহাপাড়া এলাকার কার্তিক সাহার ছেলে প্রান্ত সাহা, সাবদিয়া গ্রামের বাবুল গাজীর ছেলে টিপু সুলতান, একই গ্রামের শামসুর রহমানের ছেলে আলতাপ হোসেন, বাগদা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মামুন, একই গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদেরের ছেলে এখলাসুর রহমান কনক, আলতাপোল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মোহাম্মদ আবুল হাসান ও একই গ্রামের শেখ আজ্জাত আলীর ছেলে ঠিকাদার শেখ দেলোয়ারকে অপহরণ করে মারপিট করার পর প্রত্যেকের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয় তারা। প্রাণভয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।এভাবেই কেশবপুর এলাকায় প্রতিদিন কেউ না কেউ জামাল বাহিনীর হামলার শিকার হয়ে আসছে।