মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ঝুঁকি এড়িয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে কীভাবে জ্বালানি তেল এবং গম কেনা যায়, ভারতের কাছে সেই ‘বুদ্ধি’ চেয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানান। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে গৌহাটিতে সদ্য সমাপ্ত দু’দিনের নদী সম্মেলনে সাইড লাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে এ নিয়ে তার আলোচনা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী মোমেন। দুই নিকট প্রতিবেশীর বৈঠকে ইউক্রেন সংকট পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে স্বীকার করে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। তারা জ্বালানি সমস্যা সামাল দেয়ার জন্য কাজ করছে।রাশিয়া আমাদের কাছে তেল বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা আমাদের কাছে গমও বিক্রি করতে চায়। কিন্তু আমরা তো ওই নিষেধাজ্ঞার ভয়ে (রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা) আছি। ভারতের কাছে জানতে চেয়েছি তোমরা কীভাবে করেছো? মন্ত্রী বলেন, জ্বালানির ক্ষেত্রে যে সমস্যা, সেটা তো আমাদের জন্য সত্যিকারের একটি সমস্যা। এ নিয়ে আমরা ভয়ে আছি। তাই আমরা তাদের (ভারত) কাছে বুদ্ধি চাই।বিশেষ করে তারা সেটা (রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গম কেনা) কীভাবে করছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ নিয়ে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। তারা কীভাবে পরিস্থিতি (রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গম কেনা) সামাল দিয়েছে। তারা বড় দেশ, তারা ম্যানেজ করতে পারে। তারা কোনো পদক্ষেপ নিলে কেউ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় না। আমরা তো দরিদ্র, ছোটখাটো দেশ, আমাদের ওপর মাতব্বরি একটু বেশিই।এদিকে বাংলাদেশের বন্ধু এবং উন্নয়ন অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর কড়া সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তাদের কার্যকলাপকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য তারা বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছে। সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যাতে উন্নতি না করতে পারি এজন্য তারা বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তারা প্রতিদিন এক একটা ইস্যু নিয়ে আসে। আমরা তাদের বলতাম উন্নয়ন অংশীদার। এখন উন্নয়নে এক পয়সাও দেয় না, খালি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে! অন্যদিকে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে, তার জন্য যত ফরমায়েশ আছে সেগুলো দিচ্ছে। অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, এসব মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ প্রশ্নে উন্নয়ন অংশীদার রাষ্ট্র এবং সংস্থাগুলোর উদ্যোগ ও নীতিগুলোই বড় প্রতিবন্ধক উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে এটি আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য আমি বলবো তারা আগে নিজেদের ঘর সামলাক। ইউরোপ-আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি অত্যন্ত বেড়ে গেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকাতে চার গুণ বেড়েছে। আমাদের প্রবাসী বাঙালিরা হিমশিম খাচ্ছে।পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলাপ করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে আলোচনা করেছি আঞ্চলিকভাবে কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়ে। যাতে আমাদের সমস্যা আমরা নিজেরা ম্যানেজ করতে পারি। বিষয়টি সামনের দিনগুলোতে বড় আকারে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। মন্ত্রী বলেন, গত বছর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এ অঞ্চলের পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশে এককভাবে ভালো করলে হবে না। পুরো অঞ্চলকে উন্নতি করতে হবে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একটি নতুন কোনো জোট হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা জোট হবে না। আমরা সার্ক করেছিলাম। পশ্চিমারা বলেছিল গরিবদের ক্লাব। আবার এখন এর দিকে বেশি নজর দিচ্ছ।আমরা যদি ভালো করি তাহলে বাকিরাই আমাদের খেয়াল রাখবে।ওদিকে গম রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে না, এমন আশ্বাস পেয়েছেন বলে দাবি করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। জয়শঙ্করের সঙ্গে আসামে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ‘জয়শঙ্কর আমাকে জানিয়েছেন, গমের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত, সেটি বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে না।’ এমন কি বেসরকারি খাতকেও গম আনতে দেবে ভারত। তবে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা যদি অন্য দেশে ওই গম পাঠাতে চায়, তবে সেটির অনুমোদন দেবে না ওই দেশ বলে তিনি জানান। ৩০শে মে দিল্লিতে জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জেসিসি বৈঠক ১৯শে জুন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এর আগে ১৮ই জুন আরও বেশ কয়েকটি বৈঠক হবে।