1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : বরিশাল ব্যুরো প্রধান : বরিশাল ব্যুরো প্রধান
  3. [email protected] : cmlbru :
  4. [email protected] : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান
  5. [email protected] : ঢাকা ব্যুরো প্রধান : ঢাকা ব্যুরো প্রধান
  6. [email protected] : স্টাফ রিপোর্টারঃ : স্টাফ রিপোর্টারঃ
  7. [email protected] : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান
  8. [email protected] : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান
  9. [email protected] : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান
  10. [email protected] : আমজাদ হোসেন রাজশাহী ব্যুরো প্রধান : রাজশাহী ব্যুরো প্রধান
  11. [email protected] : রংপুর ব্যুরো প্রধান : রংপুর ব্যুরো প্রধান
  12. [email protected] : রুবেল আহমেদ : রুবেল আহমেদ
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৮ অপরাহ্ন

৬১ বছর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কঙ্গোর লুমুম্বার দাফন

রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২

১৯২৫ সালের আজকের দিন ২ জুলাই আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে জন্মেছিলেন বিপ্লবী প্যাট্রিশ লুমুম্বা। যার আবির্ভাব ছিল ঔপনিবেশকতার শেকল ভাঙতে। মাত্র ৩৫ বছরের জীবনে সক্রিয় ছিলেন সর্বোচ্চ মাত্রায়। বিদেশী পরাশক্তির মদদে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। পরে ফায়ারিং স্কোয়াডে যাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ক্ষমতার লোকেরা লুমুম্বার মৃতদেহকে পর্যন্ত বিশ্বাস করেনি। টুকরো টুকরো করে এর অংশ এসিডে পুড়িয়ে পতে ফেলে মাটিতে। আফ্রিকার কালো মানুষের লড়াইয়ের ইতিহাস অপূর্ণ এই মহানকে ছাড়া।

১৮৮৫ সাল থেকে কঙ্গো ছিল বেলজিয়ামের কলোনি। সে দেশ দখলে আমাদের ভারতবর্ষের মতো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লাগেনি। বেলজিয়ামের তৎকালীন রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড হস্তগত করেন দেশটি। পুরো আফ্রিকা জুড়ে তখন ইউরোপিয়দের দখল, শোষণ, লণ্ঠন বিরামহীন। ঔপনিবেশিক শক্তি কঙ্গোর নামই পাল্টে দেয়। কঙ্গোর নামকরণ করা হয় “বেলজিয়ান কঙ্গো”।

পরাধীন কঙ্গোর কাসাই প্রদেশের ওনালুয়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে প্যাট্রিশ এমেরি লুমুম্বার জন্ম। পারিবারিকভাবে তারা ছিলেন বাতেতেলা নৃগোষ্ঠী ভুক্ত। বাবা চাইতেন লুমুম্বা শিক্ষক হন ভবিষ্যতে। মিশনারি স্কুলে পাঠানো হয় তাকে। সেখানেও অত্যাচার চলত শিশুদের ওপর। পড়াশোনায় প্রবল ঝোঁক ছিল লুমুম্বার। মিশনারি স্কুলের শিক্ষকরা একটু যেন সদয় হন তার প্রতি। তারা তাকে বই পড়তে দিতেন। শিশু লুমুম্বার পরিবারে রাতে আলো জ্বালবার মতো তেল কেনার সার্মথ ছিল না। তিনি চেষ্টা করতেন দিনের মধ্যে বই পড়ে ফেরত দিতে।

১৮ বছর বয়সেই পড়া শেষ করতে বাধ্য হন প্যাট্রিশ লুমুম্বা। তিনি চাকরি নেন কিনশাসার ডাক বিভাগে কেরানী হিসেবে। পরে স্ট্যানলেভিলের পোস্ট অফিসে হিসাবরক্ষক হন। তার সাথে তখন যোগাযোগ ঘটতে থাকে রূপান্তরকামী রাজনীতিবিদ ও তরুণ বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মীদের। ১৯৪৭ সালে তিনি শ্রমিক ইউনিয়নে যুক্ত হন। ৫০-এর দশকের শুরুতে তিনি ঔপনিবেশিকতা বিরোধী পত্রিকায় কাজ  শুরু করেন। লিখতে থাকেন কালো মানুষদের জাগিয়ে তোলার কবিতা, নিবদ্ধ।

১৯৫৫ সালে বেলজিয়ামের তৎকালীন রাজা বদোয়াঁ কঙ্গো সফর করেন। অনেক বিপত্তি পেরিয়ে রাজার সাথে সাক্ষাৎ করেন লুমুম্বা। জন্মভূমির ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি কিছু প্রশ্ন তোলেন  রাজার সামনে। এই ঘটনায় লুমুম্বা জাতীয়ভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু খড়গে পড়েন ঔপনিবেশিক শাসকদের। ডাক বিভাগের টাকা চুরির মিথ্যা অভিযোগে তিনি ১১ মাস জেল খাটেন।

জেল থেকে বের হয়ে হতাশায় দমে যাননি লুমুম্বা। তখন কঙ্গোতে গড়ে উঠছে বেশ কিছু রাজনৈতিক শক্তি। তিনি তাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে প্যাট্রিশ লুমুম্বার নেতৃত্বে গঠিত হয় ন্যাশনাল কঙ্গোলিজ মুভমেন্ট (এমএনসি)। ঔপনিবেশকতার বিরুদ্ধে সরাসরি স্বাধীনতার ডাক দেন তিনি।

পুরো পরাধীন জনপদ জেগে উঠতে থাকে। ১৯৫৮ সালের ডিসেম্বরে ঘানায় অনুষ্ঠিত প্যান-প্যাসিফিক পিপলস কনফারেন্সে যোগ দেন তিনি। সেখানে শুধু কঙ্গো নয়, পুরো আফ্রিকা মহাদেশকে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির ডাক দেন লুমুম্বা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ উত্তর পরিস্থিতিতে ঔপনিবেশিক শক্তিও তখন হাত আলগা করে। ১৯৬০ সালে মে মাসে কঙ্গোর জাতীয় নির্বাচনে ১৩৭ আসনের সংসদে লুমুম্বার এমএনসি ৩৩ টি আসন পায়। কঙ্গোর আরেক জাতীয়তাবাদী নেতা জোসেফ কাসাভুবুর আবাকো দল পায় ১৩টি আসন। সে পরিস্থিতিতে লুমুম্বা কাসাভুবুকে প্রেসিডেন্ট পদ দিয়ে নিজে দায়িত্ব নেন কঙ্গোর প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। দেশটির মুক্তিসংগ্রামের এই ধারাবাহিকতায় জুনে স্বাধীন হয় কঙ্গো। কিন্তু যুগে যুগে কালে কালে সব দেশে প্রতিবিপ্লবী ও স্বাধীনতার প্রতিপক্ষ শক্তি থাকে। বিদেশী পরাশক্তির মদদে কঙ্গো জুড়ে চলে অরাজকতা। প্রধানমন্ত্রী হলেও লুমুম্বার অনুগত ছিল না সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গোতে “কমিউনিজম ভূত” দেখতে থাকে।

যদিও ফরাসি দৈনিক ফ্রাঁস-সোয়্যাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্যাটিশ লুমুম্বা বলেছিলেন, “আমি কমিউনিস্ট নই। ঔপনিবেশিক শাসকেরা সারা দেশে আমার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে, কারণ আমি একজন বিপ্লবী। আমাদের মানব মর্যাদাকে তাচ্ছিল্য করা ঔপনিবেশিক শাসনের আমি অবসান দাবি করি। তারা আমাকে কমিউনিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করে, কারণ আমি সাম্রাজ্যবাদীদের ঘুষ প্রত্যাখ্যান করি।”

১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে সেনা অভ্যুত্থানে লুমুম্বা ও কাসাভুবুকে পদচ্যুত করা হয়। ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার হন প্যাট্রিশ লুমুম্বা। ১৯৬১ সালের জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ বন্দী অবস্থায় ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয় কঙ্গোর স্বাধীনতার এই স্থপতিকে। নিঃশ্চিহ্ন করা করা হয় তার মৃতদেহ। সেখানে উপস্থিত বেলজিয়ামের এক পুলিশ কর্মকর্তা লুমুম্বার একটি দাঁত সরিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন।

 এ ঘটনার দীর্ঘ ৬১ বছর পর জন্মদিন ক্ষণে প্যাট্রিস লুমুম্বার সেই দাঁত ফেরত পায় কঙ্গো। এতদিন তা রক্ষিত ছিল বেলজিয়ামের কাছে। এ নেতার মরদেহ হত্যার পর এসিডে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তাই একটি দাঁত ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন মাফিক জানা যায়, ৩ দিনের শোক পালন শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কঙ্গোতে দাফন করা হয় লুমুম্বার সোনায় মোড়ানো সেই দাঁত। তবে দেশবাসীর কাছে এটি শুধুই একটি দাঁতই নয়। তাদের কাছে এটি স্বাধীনতার প্রতীক। দেশটির জাতীয় বীর প্যাট্রিস লুমুম্বারের একমাত্র ও শেষ স্মৃতিচিহ্ন এটি। তা ফিরে পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ৬১ বছর। কয়েক দশকের আইনি লড়াই শেষে গত সপ্তাহে বেলজিয়াম ফেরত দেয় কঙ্গোর জাতীয় বীরের এই শেষ স্মৃতিচিহ্নটি।

রাজধানী কিনশাসায় লুমুম্বার সম্মানে একটি সড়কের নামকরণ হয়েছে। সেখানেই এই স্মৃতিচিহ্ন সমাহিত করার আগে শেষকৃত্যে হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধা জানান।

অনুষ্ঠানে কঙ্গোর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স সিসেকেদি বলেন, “অবশেষে আমাদের নায়ক লুমুম্বা বিশ্বব্যাপী এখন আরও বেশি পরিচিতি পাবেন। আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান, দেশের সাথে কখনও বিশ্বাসঘতকতা করবেন না। দেশের উন্নয়নের জন্য, শান্তির জন্য কাজ করুন। এই মানুষটি আমাদের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। আমরা যারা এখনও বেঁচে আছি তাদের উচিত দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”

Facebook Comments
১ view

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২২ দৈনিক শিরোমনি