সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকাসহ আরও অন্য শক্তি বাংলাদেশে একটি তাদের পছন্দের একটি দলকে ক্ষমতায় আনতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্মরণে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।রাশেদ খান মেনন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপট এখনো আছে। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ১৪ দলকে সুসংগঠিত করতে হবে।তিনি বলেন, মৌলবাদী শক্তিকে বিশ্বাস করলে পস্তাতে হবে। দেশে এখন মৌলবাদীদের নব-উত্থান হয়েছে। রাস্তায় বের হলে মনে হয়, বাংলাদেশে নয়, আফগানিস্তানের পথ দিয়ে হাঁটছি। দেশে এখন রিজিম চেঞ্জ বা ক্ষমতা বদলের খেলা চলছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আমেরিকাসহ আরও অন্য শক্তি দেশে একটি তাদের পছন্দের একটি দলকে ক্ষমতায় আনতে চায়।ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আহ্বানে এভাবেই সবাই সমবেত হয়েছিলেন ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনে গণজাগরণ মঞ্চে।সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সকল সকলরাজনৈতিক মত ও পথ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ মঞ্চে সমাবেত হতে আহবান জানান তিনি। আলোচনা সভায় মূলপত্র উত্থাপন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, বস্তুত দ্বিজাতিতত্ত্বের খাঁচা থেকে বেরিয়ে এসে একটি অসাম্প্রদায়িক ও ভাষা-সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ছিল মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের প্রধান ভিত্তি। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সাম্য যে ভিত্তিকে দাঁড় করায় একটি ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্রব্যবস্থার চালিকাশক্তি হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধ সেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার সংকল্পের দিকে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে কারণেই চার মূলনীতি সংবিধানে যুক্ত করেছিলেন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব বক্তব্যই আমাদের উপলব্ধির জন্য সম্যক যথার্থ।বাদশা বলেন, বঙ্গবন্ধু সংসদে ধর্মনিরপেক্ষতার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্ম-কর্ম করার অধিকার থাকবে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে। তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না।’ আমাদের আপত্তি হলো শুধু এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, সারা বিশ্বে ৪৮ কোটি নৃতাত্ত্বিক ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। জাতিসংঘ ১৯৯২ সালে মানবাধিকার সনদে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীসহ আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণের কথা বলেছেন। আমাদের সংবিধানেও সব মানুষের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। সংবিধানের সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে, আমরাও আদিবাসী পরিচয় আর দেব না। তিনি বলেন, দেশে এখন আদিবাসীদের ওপর শোষণমূলক ও সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন চলছে, যার জন্য আদিবাসী কৃষকদের আত্মহত্যা করতে হয়।সভা পরিচালনা করেন দলটির পলিটব্যুরো সদস্য নুর আহমদ বকুল। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। সভায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নাট্যকার অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর বাসায় সাম্প্রদায়িক হামলাসহ সাম্প্রতিক নড়াইলে হিন্দুদের বাড়ি, মন্দির, দোকানপাটে যে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, তার ওপর নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়।