যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে উঠছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র! দৃশ্যত মধ্যপ্রাচ্য থেকে চোখ ফিরিয়ে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই ফাঁকে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে চীন হয়তো এগিয়ে এসেছে। কিন্তু ঘটনা সেখানে থেমে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেড় বছর হয় ক্ষমতায় এসেছেন। এ সময়ে এ মাসের প্রথম দিকে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবার মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। এটা সেই অঞ্চল, যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মূলে। ওদিকে চীনও কিন্তু পিছিয়ে নেই। প্রেসিডেন্ট বাইডেন মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগে লিখে এসেছেন, চীনকে পরাজিত করতে আমাদেরকে সবচেয়ে উত্তম অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে চীনের উপস্থিতি দৃশ্যমান আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে,এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যকে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সম্প্রদায়ের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা জোরালো হয়েছে। তেল ও গ্যাসের মতো ঐতিহ্যগত সহযোগিতার ক্ষেত্র থেকে শুরু করে কথিত নতুন ‘হেলথ সিল্ক রোড’ পর্যন্ত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করেছে। করোনা মহামারির সময় সংকটে থাকা দেশগুলোকে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগকে ব্যবহার করেছে চীন। এর মধ্যদিয়ে তারা এটা পরিষ্কার করেছে যে, এই অঞ্চলে তারা অবস্থান শক্ত করছে। এই ঘটনায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অধিক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। বৈশ্বিক নিরাপত্তার অধীনে মধ্যপ্রাচ্যকে যুক্তরাষ্ট্র একটি ছাতার মতো দেখে থাকে। সৌদি আরবে কিং ফয়সাল সেন্টার ফর রিসার্স অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজের এশিয়ান স্টাডিজ ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ তুর্কি আল সুদাইরি। তিনি বলেন, যেহেতু চীনের উপস্থিতি বেড়েছে, তাই এ থেকে চীনের প্রতি অন্য রকম এক রোমান্টিসিজম কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে চীনকে। কেউ কেউ যুক্তি দেন এ অবস্থা মধ্যপ্রাচ্যকে চীনের খুব কাছাকাছি ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তার পররাষ্ট্রনীতি এই অঞ্চল থেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে নিয়েছে। মার্চে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, চীনের কাছে তেল বিক্রিতে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে সৌদি আরব চীনা মুদ্রা ইয়েন ব্যবহারের কথা বিবেচনা করছে। এটা যদি হয় তাহলে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় তেল ব্যবসায় বর্তমানের ডলারভিত্তিক সিস্টেমের জন্য তা হবে এক বড় অবমূল্যায়ন। চীন যে পরিমাণ অশোধিত তেল আমদানি করে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবের। উদাহরণ হিসেবে, ২০২১ সালে সৌদি আরব থেকে ৮ কোটি ৭৫ লাখ ৮০ হাজার টন তেল আমদানি করেছে চীন। চীনের জেনারেল এডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের সূত্র এ কথা জানিয়েছে। এমন অবস্থায় উভয়ের জন্য লাভজনক হিসেবে দেখতে পাচ্ছে সৌদি আরব ও চীন।চীনের জন্য ইয়েনে কেনাবেচা সুবিধার। কারণ, তাতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষা পাবে তারা। সৌদি আরবের কাছে, চীন হলো একটি বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। এক্ষেত্রে তেল কেনাবেচায় এমন ব্যবস্থা এটাই ফুটিয়ে তোলে যে, চীনের উদ্বেগের বিষয়ে অবহিত সৌদি আরব।