বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনকালীন সরকারে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সরাসরি নিয়ন্ত্রণ চেয়েছে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির হাতে রাখতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে দলগুলোর নেতারা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে।সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি-জাপা মনে করছে, বর্তমান পদ্ধতিতে স্বচ্ছ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন ব্যবস্থায় গলদ আছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হতে হবে। রাজনৈতিক নেতারা সহায়তা না করলে ইসির পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না। ১৫টি দল সরাসরি ইভিএমের বিরোধিতা করেছে। ভোটের সময় সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ছয়টি রাজনৈতিক দল। জাপা, তরিকত ফেডারেশনসহ কয়েকটি দল একাধিক দিনে ভোটের প্রস্তাব করেছে। সংলাপে উঠে আসা প্রস্তাব পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।গত ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি-জাপাসহ ২৮টি দল সংলাপে অংশ নিয়েছে। জাতীয় পার্টি-জেপি ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি নির্ধারিত সময়ে সংলাপে আসতে না পারায় পরবর্তীতে সময় চেয়েছে। বিএনপিসহ ৯টি রাজনৈতিক দল সংলাপ বর্জন করেছে।২৮টি দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সংলাপে নির্বাচনে অর্থশক্তি, পেশি শক্তির প্রভাব, নির্বাচনে সহিংসতা, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে বাক্স ভরাট করা, ভোটকেন্দ্রে বাধা প্রদান, আমলাতন্ত্রের পক্ষপাতিত্ব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা, ইসির নির্লিপ্ততা ইত্যাদি বিষয়ে মতামতে উঠে এসেছে। আমরা সব মতামত পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে অবহিত করেছি। তিনি বলেন, সংলাপে কিছু বিষয় ওঠে এসেছে। অনেক পার্টি মনে করছে, এক দিনে নির্বাচন করা সমীচীন হবে না। ভারতের মতো পৃথক দিনে হওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রতুলতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা। অনেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জন্য বলেছেন। সেনাবাহিনীর প্রতি জনমানুষের আস্থা অনেক বেশি বলে তারা মনে করেন। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আরেকটা বিষয়ে সংকট থেকে যাবে, সেটা হলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থন পেয়েছি। অধিকাংশ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। অনেককেই আস্থায় আনতে পারছি না। ইভিএম নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব স্বাধীনভাবে।তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আপনাদের (রাজনৈতিক দলের) মেসেজগুলো সরকারের কাছে পৌঁছে দেব। এটা সরকারই করতে পারবে। রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এটা নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজন। আপনাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনার দরকার আছে। সরকার সমীপেও সে প্রস্তাব দেবেন। আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচনের স্বার্থে সংবেদনশীল যে কোনো উপযুক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করার মানসিকতা অবশ্যই যে কোনো দায়িত্বশীল সরকারের থাকবে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংলাপে যে ২৮টি দল অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে সরকারি দলের বিপক্ষের অনেকেরই অনেক প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারের বাইরে। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে কমিশনের কিছুই করার নেই। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধান ও নির্বাচনি আইন সংশোধন এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, নির্বাচনের তপশিলের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ও জনসমর্থনহীন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করা। আবার এর বিপরীতে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দলসমূহকে নিবন্ধন না দেওয়া। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া। নির্বাচনের সময় সিইসির ‘সুপার প্রাইম মিনিস্টারে’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া, বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের পরিবর্তে তদারকি সরকার, জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকার বা জাতীয় পরিষদ গঠন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নিয়োগ করা।