ইউনুছ, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। তবে এসব নদ-নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে থাকলেও প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের নিচু এলাকা। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদ-নদীর ভাঙন তীব্র রুপ নিয়েছে। ভাঙনের ফলে নির্ঘুম রাত কাটছে নদ-নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। এ অবস্থায় ভিটেমাটি হাড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদী পাড়ের অনেক মানুষজন। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্য মতে, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ১২৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুরের বানিয়া পাড়ায় গত এক সপ্তাহে ১২টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। যাত্রাপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, ভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় চর যাত্রাপুর বেড়িবাঁধ ও যাত্রাপুর বাজার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এছাড়াও ধরলা নদীর ভাঙনে গত ৪ দিনে সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের শিতাইঝাড় গ্রামের ৩৫টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। নদীগর্ভে চলে গেছে কয়েক একর আবাদী জমি। ওই এলাকার ভাঙনের শিকার জোসনা বেগম বলেন, গত চারদিন আগোত আমার বাড়ি ধরলা নদীর পেটোত গেইছে। মানষের (অন্যের) জায়গায়াত কোনরকম ঘরকোনা তুলছি সেডাইও (সেখানেও) নদী আসছে। কোনবেলা (কখন যেন) ওই ঘরটাও ভাঙি যায়। হামার স্বামী দিন করে দিন খায়, কোন জমিজমা নাই কোনডাই (কোথায়) যামো কি করমো চিন্তায় বাঁচি না।নদী ভাঙনের শিকার হরিপুর ইউনিয়নের পাড়াসাধুয়া এলাকার মঞ্জু মিয়া বলেন, গত এক সপ্তাহে আমার এখানে প্রায় শতাধিক বাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। এখানকার অনেক পরিবার ভিটেমাটি হাড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। এখনো ভাঙন অব্যাহত আছে এখানে।হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, বড়সাধুয়া থেকে কাশিমবাজার পর্যন্ত সড়কটি তীব্র ভাঙনে নদীতে বিলিন হয়েছে। সেই সাথে এখানকার প্রায় শতাধিক পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে নিঃশ্ব হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে তারা এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তবে ওই এলাকায় ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আল মারুফ জানান, হরিপুর ইউনিয়নে ভাঙন কবলিত মানুষজনের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের দ্রুত সয়হতা করা হবে।কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আগামী ৪৮ ঘন্টায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এদিকে ভাঙন রোদে জেলার বিভিন্ন এলাকায় জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তুা ফেলানো হচ্ছে।