আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলকে ধরে বেঁধে নির্বাচনে আনবেন না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে অনড় থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ভোটে আনা প্রসঙ্গে আহ্বানের বাইরে বিশেষ কৌশল থাকবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সোমবার নিজ কার্যালয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বর্তমান কমিশন সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। কেন চাই? সক্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হলে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। পার্টিরাই সারাবিশ্বে এই ভারসাম্য সৃষ্টি করে। সকলের প্রতি আন্তরিকভাবে উদাত্ত আহ্বান থাকবে- আপনারা আসেন, সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখেন ও সহায়তা করেন। আমরা কাউকে ধরে-বেঁধে আনবো না।’
তিনি বলেন, আজকে দু’টো দলের সঙ্গে সংলাপ হলো এই অর্থে সংলাপ শেষ হলো। সিদ্ধান্ত গ্রহণে যাতে সহায়ক হয় সেজন্যই সংলাপ করেছি। সংলাপ করে আমরা লিখিত আকারে সিদ্ধান্ত জানিয়েছি তাদের। ইভিএম নিয়েও বৈঠক করেছি। ইভিএম নিয়েও একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। আমাদের নিজস্ব বিবচেনায় দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ৩০০, ১০০, ১০ বা ২০টা নয়, আমরা একটা যৌক্তিকভাবে ব্যালট পেপারে ১৫০ আসন ও ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের লিখিত বক্তব্য আছে। সেগুলোও পর্যালোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকে বিশ্বাস করেন, অনেকে করেন না এই মেশিন নিয়ে। তবে আমাদের সিদ্ধান্ত আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি-না সেটা নির্ভর করবে এটা পাওয়া যাবে কিনা, তার ওপর। কারণ, এটার বেশিরভাগ পার্টস আসবে বিদেশ থেকে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা শুধু দলকে নয়, সরকারকেও সংলাপ থেকে আসা মতামত জানিয়েছি। কেননা, দলগুলো কী বলছে তা সরকারেরও জানা উচিত। সরকার কিন্তু কোনো দলের নয়। সেই বিভাজনটাকে মাথায় রেখে আমরা সরকাকে জানিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বিরোধী দলগুলো। সেটা আমরা দলগুলোকে জানিয়েছি। ভোটার তালিকা আগামী বছর মার্চ মাসে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করবো। রোডম্যাপ সপ্তাহ দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্তভাবে অবহিত করতে পারবো।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আমরা খুব খুঁটিনাটি কাজ করছি। ইভিএমের মধ্যে ওই ধরনের কারচুপি, এইটা সেইটা এবং কার্ডের মাধ্যমে কী সম্ভব, আমরা তা খতিয়ে দেখেছি। কারচুপির বিষয় কিন্তু পাইনি। ব্যক্তি শনাক্তকরণের পর আঙ্গুলের ছাপ দিলেই ছবি ভেসে আসবে। এরপর ব্যালট ওপেন হবে। ৪০ সেকেন্ড থাকবে। এর মধ্যেই ভোট দিতে হবে।’
সিইসি বলেন, ইভিএমে ভোট নেওয়ার ক্ষেত্রে একটা অসুবিধা কেউ কেউ লক্ষ্য করেছেন, যে একজন লোক বুথে যদি দাঁড়িয়ে থাকে। তিনি যদি ভোটারকে বলেন- আপনি যান, ভোটটা আমি দিয়ে দেবো। সেই সংকটটা আমাদের মাথায় আছে। এজন্য আমরা সিসি ক্যামেরা দেবো। আমরা কিন্তু কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করবো প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ওপর। কেউ যদি বৈধ বা অবৈধভাবে ভোট বাধাগ্রস্ত করে তবে তাৎক্ষণিক ভোট বন্ধ করে ওই লোককে বের করে দেবেন। তিনি না পারলে পুলিশ ডেকে বের করে দেবেন। তিনিও পারলেন না, পুলিশও পারলেন না, তাহলে ভোট বন্ধ করে দেবেন। এছাড়া প্রিজাইডিং কর্মকর্তা যদি মাস্তানকে যদি অ্যালাইউ করেন তবে শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছি।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নতুন প্রকল্পে ইভিএম সংরক্ষণের ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। এটা আমাদের প্ল্যান। প্রকল্প যদি অনুমোদন হয়, বাস্তবায়ন যদি করতে পারি আর যদি না পারি তবে ব্যালটে নির্বাচন করবো।
দলগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইসি একা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে না। দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ইসির ওপর ছেড়ে দিলে একারপক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে, যদিও আমরা চেষ্টা করবো।
ইসির অধীনে স্বরাষ্ট্রসহ চার মন্ত্রণালয় নেওয়ার বিষয়ে সিইসি বলেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওপর ইসির কর্তৃত্ব আছে। এতোদিন হয়তো প্রয়োগ করা হয়নি। মন্ত্রণালয় ন্যস্ত করার বিষয়টি এটা ইসির অধীনে হতে পারে না। এটা সংবিধানে বলা আছে। কাজেই আপনি যদি চান আমরা মন্ত্রী হবো, এটা সংবিধান অ্যালাউ করবে না। যে ক্ষমতা আছে সেটাই প্রয়োগ করলে আমরা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে পারি।