প্রথম ম্যাচে শাখতার দোনেৎস্কের কাছে ঘরের মাঠে হেরে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের আসর শুরু করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। পরে মাঝের তিন ম্যাচে এক ড্র ও দুই জয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনেও সফল ছিল জিনেদিন জিদানের দল। কিন্তু পঞ্চম রাউন্ডে শাখতারের বিপক্ষে আবার হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়ার শঙ্কায় স্প্যানিশ জায়ান্টরা।
মঙ্গলবার রাতে রিয়াল মাদ্রিদের সামনে সমীকরণ ছিল খুবই সহজ, জিতলেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্ব নিশ্চিত, ড্র করলেও জোরালো হবে সম্ভাবনা। কিন্তু লুকা মদ্রিচ, টনি ক্রুসরা বেছে নিলেন ঠিক অন্যটাই। শাখতারের কাছে ০-২ গোলে হেরে এবার গ্রুপপর্বেই বিদায়ের চোখরাঙানি পাচ্ছে টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সফলতম দলটি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘বি’ গ্রুপে রিয়ালই ছিল ফেবারিট। কিন্তু পাঁচ রাউন্ডের খেলা শেষে তারাই এখন ধুঁকছে। যেখানে ২ জয়, ২ পরাজয় ও ১ ড্রয়ে তাদের সংগ্রহ ৭ পয়েন্ট, টেবিলে অবস্থান তৃতীয়। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট শাখতারেরও। হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় দুই নম্বরে অবস্থান করছে শাখতার।
অন্যদিকে পাঁচ ম্যাচে ২ জয় ও ২ ড্র’তে পাওয়া ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে কাগজে-কলমে গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দল বরুশিয়া মনশেনগ্ল্যাডব্যাখ। ষষ্ঠ ও শেষ রাউন্ডের ম্যাচে মনশেনগ্ল্যাডব্যাখের বিপক্ষেই লড়বে রিয়াল মাদ্রিদ। সেই ম্যাচে জিতলেও বাদ পড়ে যেতে পারে লস ব্লাঙ্কোসরা।
কেননা শাখতারের শেষ রাউন্ডের ম্যাচ এখনও পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে থাকা ইন্টার মিলানের বিপক্ষে। ফলে ইন্টারের বিপক্ষে শাখতার জিতলে এবং রিয়ালও তাদের শেষ ম্যাচ জিতলে দুই দলেরই পয়েন্ট হবে সমান ১০; সেক্ষেত্রে হেড টু হেডে পিছিয়ে থাকায় বাদ পড়বে রিয়াল।
আবার ড্র করলেও পরের রাউন্ডের টিকিট পাওয়ার সুযোগ থাকবে রিয়ালের সামনে। সেটি কীভাবে? এ জন্য প্রার্থনা করতে হবে ইন্টারের বিপক্ষে শাখতারের পরাজয়ের। তখন শাখতারের পয়েন্ট থাকবে ৭, ড্র করার পর রিয়ালের হবে ৮; যা কি না ইন্টার ও মনশেনগ্ল্যাডব্যাখের সমান হবে।
তখন তিন দলের হেড টু হেডে এগিয়ে থাকার সুবাদে পরের রাউন্ডে যাবে রিয়াল। শেষ ম্যাচটি হারলে কোনো সুযোগই থাকবে না রিয়ালের সামনে। তখন পথ খুলে যাবে ইন্টারের। তারা শাখতারকে হারাতে পারলে চলে যাবে শেষ ষোলোতে। বাদ পড়বে রিয়াল ও শাখতার। সব মিলিয়ে জমে উঠেছে বি গ্রুপ, শেষ রাউন্ডের দুই ম্যাচের দিকেই তাই সবার থাকবে তীক্ষ্ণ নজর।
এই গ্রুপের সমীকরণ এতটা জটিল হয়েছে মূলত পঞ্চম রাউন্ডের দুই ম্যাচের মাধ্যমেই। যেখানে রিয়াল হেরেছে শাখতারের কাছে এবং টেবিল টপার মনশেনগ্ল্যাডব্যাখকে হারিয়ে দিয়েছে তলানিতে থাকা ইন্টার মিলানকে। ফলে এখনও নিশ্চিত হয়নি কোনো দলের শেষ ষোলোর টিকিট, পথ খোলা রয়েছে সব দলের সামনেই।
রিয়ালকে দ্বিতীয়বার হারানোর ম্যাচে যে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে শাখতার- এমনটা নয়। নিজেদের ঘরের মাঠে বল দখল কিংবা আক্রমণের হারে বেশ পিছিয়েই ছিল স্বাগতিক শাখতার। কিন্তু কাজের কাজ গোলটি পায়নি রিয়াল, একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করেছেন করিম বেনজেমা, মার্কো অ্যাসেনসিওরা।
অন্যদিকে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন শাখতার খেলোয়াড়রা। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ৫৭ মিনিটের সময় রিয়ালের দুই ডিফেন্ডার ফারল্যান্ড মেন্ডি ও রাফায়েল ভারানের ব্যর্থতায় বল পেয়ে যান ডেন্টিনহো, তখন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন ভারানে। খুব সহজেই ঠাণ্ডা মাথার শটে বল জালে জড়ান ডেন্টিনহো।
দ্বিতীয় গোলের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় আরও ২৫ মিনিট, খেলার ৮২ মিনিটের সময় ইসরাইলি মিডফিল্ডার ম্যারন সলোমনের একক নৈপুণ্যে ব্যবধান দ্বিগুণ করে শাখতার। ডি-বক্সে ঢুকে জোরালো শটে রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে পরাস্ত করে জাল কাঁপান সলোমন। চলতি আসরে রিয়ালের জালে এটি নবম গোল। গ্রুপপর্বে আর কখনও এত গোল হজম করতে হয়নি তাদের।