তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের আরজী নওগাঁ লাটপাড়া মহল্লায় অবস্থিত নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-এ কম্পিউটার টেকনোলজিতে ২০১১ সালে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে যোগদান করেন আমিনুল ইসলাম। এর আগে তিনি কয়েকটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও চাকুরী করেছেন। তবে নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আসার পর তার ভাগ্য খুলেছে। নিয়মানুযায়ী কোন জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর কখনো বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। তবে আমিনুল ইসলামের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয়েছে। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হয়েও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে আছেন প্রায় এক বছর যাবত। বর্তমানে তিনি পুরো কলেজের নিরাপত্তা কর্মকর্তার (ওসি সিকিউরিটি) দায়িত্বে আছেন। অধ্যক্ষের সাথে সখ্যতার জেরে কলেজের সকল কাজে প্রধান্য পান তিনি। তাই নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্বে হেরফের করলেও কেউই তাকে কিছু বলার সাহস পান না। গত ১১ অক্টোবর দায়িত্বটি কাওকে বুঝে না দিয়েই হঠাৎ চার দিনের সফরে ঢাকায় চলে যান আমিনুল। এরমধ্যে অধ্যক্ষ নিজেও ঢাকায় অবস্থান করায় ভেঙে পড়ে কলেজটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে ২ জন কর্মরত থাকলেও ডিউটি পালন করতে থাকেন একজন। সম্পূর্ণ সিসিটিভি নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পাসে গত ১৩ অক্টোবর রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টায় প্রবেশ করে ডাকাত দলের সদস্যরা। মাস্ক পরিহিত ২জন ডাকাত নৈশ্য প্রহরীকে জিম্মি করে কম্পিউটার সফটওয়্যার ল্যাবের ৩৯টি পিসির মূল্যবান যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে চলে যায়। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় নড়বড়ে অবস্থার জন্য কলেজটি ক্ষতির মুখে পড়ায় বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতেও নিষেধ করা হয় শিক্ষকদের। এমনটি ল্যাবটির ছবি তুলতে না দিয়েই সেটি তড়িঘড়ি করে সিলগালা করে দেয়া হয়।কলেজের ড্রাইভার গোলাম ফরিদ শেখ বলেন, ভোর ৫টায় কলেজে ডাকাতি হওয়ার খবরটি জানিয়ে জরুরী ভিত্তিতে আসতে বলা হলে শিক্ষকদের নিয়ে ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। সিকিউরিটি গার্ডকে বেঁধে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে স্যাররা কম্পিউটার ল্যাবে গিয়ে দেখেন ৪০টি পিসির সব মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। সিসি ক্যামেরায় ডাকাতির পুরো দৃশ্য স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। তবে মাস্ক পরিহিত থাকায় ডাকাতদের চেনা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী বলেন, কলেজে সিকিউরিটি ব্যবস্থায় নড়বড়ে অবস্থার জন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলা মূল কারণ। যার যে দায়িত্ব তাকে দিয়ে সেটা করানো হয় না। আমিনুল স্যার যদি ঢাকায় যাওয়ার আগে তার দায়িত্ব অন্য কাওকে বুঝে দিয়ে যেতেন, তাহলে কলেজটি এই ক্ষতির মুখে কখনোই পড়তো না।
এবিষয়ে কম্পিউটার টেকনোলজির জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, জরুরী কাজে শিক্ষাবোর্ডে যাওয়ায় ছুটির কোন দরখাস্ত দেয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। এজন্য দায়িত্বটি অন্য কাওকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন ত্রুটি ছিলো না বলে দাবী করেন তিনি।
নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আব্দুর রকিব বলেন, ডাকাতির ঘটনায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন বোর্ডে প্রেরণ করা হয়েছে। লুট হওয়া ৩৯টি পিসির মূল্যবান যন্ত্রাংশ উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করছে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলায় এমনটি হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, নিরাপত্তা কর্মকর্তার পদ সামান্য একটি দায়িত্ব মাত্র। যেকোন শিক্ষকই পর্যায়ক্রমে দায়িত্বটি পেয়ে থাকেন। তার অনুপস্থিতিতে কলেজে নিরপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করেন তিনি।