শাহিন আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি মৌলভীবাজার: শীতের সকাল আর বাংলার ৬ ঋতু। মানবমনের সঙ্গে প্রকৃতির রয়েছে নিগূঢ় যোগসূত্র। প্রকৃতির বিচিত্র উপাদান ও অনুষঙ্গ মানবহৃদয়ের গোপন উপলব্ধি প্রকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে গিয়েই মানুষ আবিষ্কার করেছে নিজেকে। বোঝার চেষ্টা করেছে নিজের সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতার কথা। প্রকৃতির বিচিত্র উপাদান ও অনুষঙ্গের মাঝে উল্লেখযোগ্য শীত ঋতু। সেই আদিকাল থেকে শীতের সঙ্গে মানুষের গড়ে উঠেছে পরস্পর বিপ্রতীপ দুই সম্পর্ক। শীতের নানা উপহার ও উপাচার মানুষকে দেয় পরম প্রশান্তি; অপরদিকে তীব্র শীত আনে দুঃসহ কষ্ট। প্রশান্তি ও কষ্ট- এই দুই ভাব নিয়ে বাঙালি কবি স্মরণ করেছেন শীতকে; কবিচিত্তের নানা আবেগ আর উপলব্ধি আর অভিজ্ঞানের বাণীমূর্তি শীতকে আশ্রয় করে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলা কবিতার দিকে চোখ ফেরালে আমরা দেখতে পাব, ঋতু-পর্যায়ের মধ্যে শীতকে নিয়ে পঙ্ক্তিমালা সজ্জিত হয়েছে প্রধানত দুভাবে। প্রথমত, শীত ঋতুর বহিরাঙ্গিক বর্ণনা এসেছে কবিদের রচনায়; দ্বিতীয়ত, শীতের অনুষঙ্গে ব্যক্ত হয়েছে মানবহৃদয়ের নিগূঢ় কোনো দার্শনিক প্রত্যয়। বহিরাঙ্গিক বর্ণনার চেয়ে দার্শনিক প্রত্যয়ঋদ্ধ ধারার পঙ্ক্তিমালাই যে শীত-বিষয়ক কবিতার প্রধান সম্পদ- সে কথা লেখাই বাহুল্য।
এ ধারায় কবিতায় শীতের আবির্ভাব ঘটেছে মানবহৃদয়ের বিশেষ কোনো উপলব্ধি বা অভিজ্ঞান প্রকাশের অব্যর্থ উৎস হিসেবে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে শীতের উপস্থিতি ততটা বেশি না হলেও একেবারে বিরল নয়। বৈষ্ণব পদাবলিতে শীত এসেছে রাধার অভিসার-অনুষঙ্গে। শীতের প্রবল প্রতিক‚লতা উপেক্ষা করে রাধা চলেছে কৃষ্ণ-অভিসারে। চারদিক জনশূন্য, শীতের দাপটে প্রকৃতি স্তব্ধ, চারধারে ঘন কুয়াশা- এসব বৈরী আবহ অতিক্রম করে রাধার কৃষ্ণ-অভিসারের অনুষঙ্গে পদাবলিতে পাওয়া যায় শীতের চকিত বর্ণনা। মঙ্গলকাব্যগুলোও শীতের উপস্থিতি লক্ষণীয়। অধিকাংশ মঙ্গলকাব্যে নায়িকাদের বারো মাসের দুঃখ বর্ণনা-সূত্রে শীত ঋতুর আবির্ভাব। শীত এখানে যত-না আনন্দের অনুষঙ্গ, তারচেয়ে অনেক বেশি বেদনার শোকগাথা। বাঙালির হাজার বছরের দুঃখের কথাই যেন ফুল্লরার মুখ দিয়ে মুকুন্দরাম প্রকাশ করেছেন, নিচের কবিতাংশে শীতের অনুষঙ্গে।