তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে হাসপাতালের জন্য ওষুধ, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, গজ ব্যান্ডেজ তুলা ও আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য ৪৩ লাখ টাকার কার্যাদেশ পায় চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সে অনুযায়ী তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মালামাল সরবরাহ করে যথারীতি বিল উত্তোলন করে নিয়ে যায়। এর মাঝে আমেনা ট্রেডার্স ও এ এ এন্টারপ্রাইজের সরবরাহ করা মন্টিলুকাস্ট গ্রুপের ৫২ হাজার ৫৮৪ পিস ওষুধ হাসপাতালের স্টোর থেকে গায়েব হয়ে যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় আট লাখ ৩২ হাজার টাকা।
সম্প্রতি হাসপাতালের স্টোর স্থানান্তরিত হলে, সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: মোনোয়ার হোসেনের দৃষ্টিতে ওষুধ চুরির ঘটনাটি প্রথমে ধরা পরে। এ তথ্য নিশ্চিত করে ওই কর্মকর্তা জানান, ঘটনাটি জানার পরপরই তিনি ডা: জহুরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই তদন্ত কমিটি প্রধান ডা: জহুরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে তদন্ত করতে গিয়ে ওষুধের হালনাগাদ প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায়।
তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য থেকে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ ওষুধ সরবরাহের পর স্টোরকিপার (ভান্ডার রক্ষক) মো: শাহাদৎ হোসেন আউটডোর-ইনডোর, জরুরি বিভাগ ও সাব সেন্টারের কোথাও ওই ওষুধ সরবরাহ করেননি। এর ফলে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা শ্বাসকষ্টজনিত রোগীরা মন্টিলুকাস্ট গ্রুপের ওষুধ থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়েছেন। পরে এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে উঠে আসে ওষুধ চুরির ঘটনার নানা অসঙ্গতির চিত্র। নিয়ম অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা মালামাল বুঝে নেবে হাসপাতালের সার্ভে কমিটি। পরে আউটডোর-ইনডোর, জরুরি বিভাগ ও সাব সেন্টারের চাহিদা মোতাবেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওষুধ সরবরাহ করবেন স্টোর কিপার। কিন্তু এখানে সে নিয়মের সম্পূর্ণ ব্যত্যয় ঘটেছে।
এ বিষয়ে স্টোরকিপার (ভান্ডার রক্ষক) মো: শাহাদৎ হোসেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো মালামাল দেয়নি। তবে দু-এক সপ্তাহের মধ্যে তারা ওষুধ সরবরাহ করবে।
কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো: আবিদ হাসানের দাবি, তারা মালামাল সরবরাহ করার পর স্টোরকিপার মো: শাহাদৎ হোসেন একটি ওষুধপ্রাপ্তি স্বীকারপত্রে স্বাক্ষর করে দেন। যা তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার পরই তারা বিল প্রদান করে।
কিন্তু পুরো প্রক্রিয়ার মাঝে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ বুঝে পাওয়ার পর সার্ভে কমিটি রিপোর্ট দেবে। সে আলোকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দেবেন। কিন্তু এখানে সে নিয়ম মানা হয়নি। সার্ভে কমিটির রিপোর্ট ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: মোনোয়ার হোসেনে বলেন, স্টোরকিপারের ওষুধপ্রাপ্তির স্বীকারপত্র পাওয়ার পরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। সার্ভে কমিটির রিপোর্ট ছাড়া বিল কেন দিলেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জুন ক্লোজিংয়ের ব্যস্ততায় সরল বিশ্বাসে আমি বিল দিয়েছি। তদন্ত কমিটি স্টোরকিপারকে এক মাসের সময় দিয়েছেন বিষয়টি সুরাহা করার জন্য।
এ দিকে ফার্মেসি বিভাগের প্রধান মো: মিজানুর রহমান ও সিস্টার ইনচার্জ মো: আরিফুল ইসলাম বলেন, তারা এ অর্থ বছরে কোনো প্রকার মন্টিলুকাস্ট গ্রুপের ওষুধ বুঝে পাননি। এর ফলে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের তারা এ গ্রুপের কোনো ওষুধ সরবরাহ করতে পারেননি।
একটি অসমর্থিত সূত্র থেকে জানা যায়, ওষধ চুরির ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরদ স্থানীয় রাজনৈতিক মদদপুষ্ট একাধিক সুবিধাবাদি গ্রুপ ঘটনাটি চাপা দেয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে।
হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু মন্টিলুকাস্ট গ্রুপের ওষুধ নয়, নিবিড় তদন্ত হলে ওষুধসহ অন্যান্য মালামালের অসঙ্গতিও ধরা পড়বে।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা: রামপদ রায় বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বেশি আমি মন্তব্য করতে পারব না।