আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা তদন্তে নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। দুবাইয়ের একটি নম্বর দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক তালুকদার। জঙ্গি ছিনতাই পরিকল্পনার পুরোটা জানতেন তিনি।২০ নভেম্বর দুই জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীমের সঙ্গে লাপাত্তা হন এক নারীও। তিনি হলেন জঙ্গি সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা খানম শিখা। প্রকৌশলী শিখার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। ছিনতাই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কে বা কারা শিখাকে তাঁর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ থেকে পুরান ঢাকার আদালত চত্বর পর্যন্ত এনেছিলেন, এটি তদন্ত করতে গিয়ে আইনজীবী ফারুকের নাম আসে। শিখার বাবা মো. হোসাইন পুলিশকে জানিয়েছেন, ২০ নভেম্বর সকালে ময়মনসিংহে যান ফারুক। এর পর শিখা সন্তানসহ তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসেন। ওই ঘটনার এক মাস আগেও শিখার সঙ্গে দেখা করতে ময়মনসিংহে যান ফারুক। ওই সময় শিখার বাবার সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। প্রথম দিন বাসার বাইরে ফারুকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন সোহেলের স্ত্রী। ওই ব্যক্তির বেশভূষা দেখে শিখার বাবার তখনই সন্দেহ হয়েছিল- তিনি কোনো জঙ্গি গ্রুপের সদস্য। তবে কে, কী কারণে ফারুক তাঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন- এটি পরিস্কার করে বলেননি। এমনকি হোসাইনের জামাই সোহেলের বোন তানজিলা আফরোজ জাহানকে ফারুক বিয়ে করেছেন- এটিও জানাননি। তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটপ্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান সমকালকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিগত তদন্তে ছিনতাই অপারেশনে ফারুকের সংশ্নিষ্টতা পাওয়া গেছে। কারাগারে থাকাকালে জঙ্গিবাদে ভিড়েছেন তিনি। তাঁরা বিভিন্ন দেশের নম্বর ব্যবহার করে গোপনে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন। ফারুক কীভাবে দুই জঙ্গিকে পালাতে সহযোগিতা করেছেন, সে ব্যাপারে শিখার বাবা সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালের দিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় ছয় মাসের মতো কারাগারে ছিলেন সাবেক রেলমন্ত্রীর এপিএস ফারুক। ওই সময় তাঁর সঙ্গে কারাগারে পরিচয় হয় লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার আসামি আনসার আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গি সোহেলের। এর পর তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়েছিল। ফারুকের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ। পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ার পরও সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই জঙ্গি সোহেলের বোন তানজিলাকে বিয়ে করেন ফারুক। সোহেলের ইচ্ছাতেই এ বিয়ে হয়েছিল। কারাগার থেকে নবদম্পতিকে শুভেচ্ছাও জানান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি। এর পর ফারুক তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে বসবাস শুরু করেন