প্রিন্স আরিফ খান, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এমপি বলেন, শিক্ষকদের একটা স্বীকৃতি একটা মর্যাদায় নিয়ে আসতে বিদ্যালয়গুলো একযোগে জাতীয়করণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এক যোগে ৩৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬,৫৬৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক লাখ ৪ হাজার শিক্ষককে এক যোগে জাতীয়করণ করেছেন।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় মেহেরপুরের জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ঐতিহাসিক জাতীয়করণের ১০ম পূর্তি উপলক্ষে কৃতজ্ঞতা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এমপি।
বাংলাদেশ প্রাথমিক কল্যাণ সমিতি মেহেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মোঃ কমর উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোঃ রাফিউল আলম পিপিএম-সেবা, স্থানীয় সরকারের মেহেরপুরের উপ-পরিচালক মৃধা মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম, মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ভূপেশ রঞ্জন রায়, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ মেহেরপুরের সভাপতি প্রফেসর হাসানুজ্জামান মালেক।
প্রতিমন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরও বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারক্ষমতায় ছিল। তাদের কাছে অবহেলিত শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবী জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি জামায়াত জোট সরকার সেটা করতে পারেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৫ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন। তখন এবিষয় গুলো শিক্ষকদের পক্ষ থেকে যৌক্তিকভাবে তুলে ধরা হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার মত সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে এক সাথে সাড়ে ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করলেন।
দূর্দশাগ্রস্থ অবস্থা থেকে স্বীকৃতি হিসেবে ৫শ টাকার বেতন থেকে শিক্ষকদের একটা স্বীকৃতি, একটা মর্যাদায় নিয়ে আসতে বিদ্যালয়গুলো একযোগে জাতীয়করণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষকদের ত্যাগ রাষ্ট্রস্বীকার করে নিয়ে আপনাদের একটি সম্মানের যায়গা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছোট ছোট শিশুদের আগামী দিনের জন্য তৈরী করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অবহেলিত ছিল। তখন একজন শিক্ষক বেতন পেতেন মাত্র ৫শ টাকা। সেই ৫শ টাকা বেতন নিয়ে তারা এত বড় একটা মহান দায়িত্ব পালন করতেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনারা (শিক্ষকরা) সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়েজিত রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে আপনারা শিক্ষকতা পেশার মধ্যে রয়েছেন। একটা শিশুর লেখাপড়ার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ তৈরী করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষার অবদান সবচেয়ে বেশী। একটি শিশুর প্রত্যেকের প্রত্যাশা থাকে চমৎকার আচরণের মধ্যে শিক্ষকদের সুন্দর করে শেখানোর কৌশল, অনুপ্রেরণা ও আদরের মধ্য দিয়ে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠবে। শুধু আত্মবিশ্বাসই নয়, অনেক ভালোভালো অভ্যাস শিশুদের মধ্যে গড়ে তুলবেন এটা জাতীর প্রত্যাশা।
একজন সন্তান লেখাপড়াকে উপভোগ করতে, ভাল অভ্যাস গড়ে তুলতে, সফল হবার জন্য নীতি নৈতিকতা বিষয় ছোট্ট শিশুর মনে শিক্ষা দিতে শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বড়দের সম্মান করতে, ভাল কথা বলতে, বাবা-মায়ের হক কি আছে, বাবা মায়ের সাথে কেমন করে কথা বলতে হয়, তার মধ্যে স্বপ্ন জাগাতে এবং ইতিহাসের ভাল-মন্দ বিষয়ে আগ্রহী করে গড়ে তোলাই হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ ।
তিনি বলেন, শিশুদের আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নীতি নৈতিকতা শেখা ভাল-মন্দের পার্থক্য শেখা এবং সফল মানুষ হবার অভ্যাস শেখাতে হবে।
তিনি বলেন, শিশুদের সফল মানুষ হওয়ার জন্য অভাব শেখাতে হবে। তাদের দিয়ে ভালোভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাদের স্বাবলম্বী হবার জন্য বলতে হবে। শিশুদের সাথে নেগেটিভ কথা না বলে পজেটিভ কাজের মধ্যে দিয়ে হাসি খুশি রাখতে হবে। এছাড়া একজন শিশুর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কম ওজন প্রয়োগ করতে হবে। যাতে করে সে বিজয়ী হওয়ার আনন্দটা উপভোগ করতে পারে। অতিরিক্ত নয় অল্প দিয়ে শেখাতে হবে, যাতে করে আনন্দের সাথে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারে। শিশুদের স্কুলে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরো বলেন যখন নীতি ও নৈতিকতার অনেক বিষয়ে ছোট্ট শিশুর মনে কিভাবে বড়দের সম্মান করতে হয়, কথা বলতে হয়, বাবা মায়ের হক কি আছে, কিভাবে বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে হয় একই সাথে ইতিহাসের কিছু বিষয় ও জীবনে যারা সফল হয়েছে তাদের বিষয়টি কেমন এবং লেখাপড়ার বিষয়ে ব্যাপকভাবে আগ্রহ করে গড়ে তোলাই কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য।
প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের কৃতকর্মের ফল পাচ্ছে বিএনপি। মানুষের রোশানলে পড়ে তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে মাত্র ৩০ টি আসন, আর ২০১৮ সালের নির্বাচন আসনে তিনটি করে মনোনয়ন দিয়ে আসন বানিজ্য করেছে। আসনের বিনিময়ে লন্ডনে বসে বাণিজ্য করার ফল পেয়েছে এ নিবাচনে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের কোন বিষয়কে সম্মান দেয়নি। তারা রাজাকার আলবদর আল শামসদের মন্ত্রীত্ব দিয়েছিলো। বাংলাদেশকে ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। জঙ্গীবাদে রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলো এদেশকে। সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা, উদীচীর ও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান, আদালতসহ কোন স্থানই তাদের বোমা হামলার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তারা যতবার নির্বাচনে এসেছে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। তারা অপপ্রচার, মিথাচার আর ষড়যন্ত্রেই লিপ্ত সব সময়।