জহিরুল ইসলাম, বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটা গুলোই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন। উপজেলা শহরের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন কলসকাঠীর ইটভাটা গুলো গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকার বাড়ি ঘরের মধ্যে। কলসকাঠী ইউনিয়নের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। বরিশাল বিভাগে বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়ন অবৈধ ইটভাটার তালিকায় রয়েছে প্রথম স্থানে। প্রতিবছরের তুলনায় এই বছর কাঠ খড়ি দিয়ে এইসব ইটভাটা ইট পোড়ানো হচ্ছে। আর ইট পোড়ানোর জন্য ইট ভাটার মালিকরা পুর্ববর্তি বছর গুলির ন্যায় এবারেও জ্বালানী হিসেবে কাঠ খড়ি দিয়ে পোড়াচ্ছে। এ জন্য ইটভাটার মালিকগন গত কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার মন কাঠখড়ি সংগ্রহ করে তাদের ইট ভাটার নিদৃষ্ট স্থানে মজুদ করে ইট পোড়াচ্ছে। এখনও কাঠ খড়ি সংগ্রহ অব্যহত রয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে কাঠখড়ি দিয়ে নির্বিঘ্নে পোড়ানো হচ্ছে ইট। আর এ ভাবেই চলতে থাকবে ইট পোড়ানোর পুরো মৌসুম। ব্যাঙের ছাতার মতো ইটভাটা গুলো গড়ে উঠলেও পরিবেশ অধিদপ্তর সহ স্থানীয় প্রশাসন এই বছর কোন অভিযানে নামেনি।
অথচ দেশের সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের ব্যবস্থা করতে ও ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে গত ১৩ নভেম্বর, বাংলাদেশের সব জেলার অবৈধ ইটভাটা ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশনা জারি করতে বলেছেন হাইকোর্ট। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব এবং পরিবেশ সচিবকে এ নির্দেশনা জারি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়েছে। তবে এবারেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করবেন কি না এ নিয়ে সচেতন মহল সন্দিহান। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও, তা মানা হচ্ছে না। ইট পোড়ানোর মৌসুম আসতেই আবার চালু করা হয়েছে অবৈধ ইটভাটাগুলো। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতেও দেখা যাচ্ছে না প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি ইউনিয়ন সহ গারুড়িয়া,দুধল,কবাই,নলুয়া,চরামদ্দি,চরাদি,ফরিদপুর,দাড়িয়াল ইউনিয়নে শতাধিক অবৈধভাবে ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। কলসকাঠি ৬ নং ওয়ার্ড এর পান্ডব নদীর চরে একতা ব্রিকস,শাপলা ব্রিকস,দুবাই ব্রিকস,গাজী ব্রিকস সহ উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক ড্রাম চিমনি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। তারা নদীর চর থেকে মাটি কেটে ইট তৈরি করছে। ফসলীয় জমি ও বাড়ি ভিতরে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ ইট ভাটা গুলো। সরকারের নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি আইন অমান্য করে ইট ভাটা গুলোতে কয়লার বদলে কাঠের স্তুপ রেখে পোড়ানো হয় কাঠ। যার ফলে বন সম্পদ উজাড় হচ্ছে। এসব এলাকায় পরিবেশ দূষিত যার ফলে রবি শোষ্য,আমের মুকুল সহ সব ধরনের ফল নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের চর রঘুনদ্দিন ও কবাই ইউনিয়নের পূর্ব শিয়ালঘূনি গ্রামে কারখানা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে একাধিক অবৈধ ইটের ভাটা। বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ইটের ভাটায় ড্রাম চিমনির ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বনাঞ্চল উজাড় করে ট্রলি ও ট্রলারযোগে কাঠ এনে ইট ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অশাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ইট ভাটার মালিকরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক ড্রাম চিমনি ইট ভাটা দেখা গেছে সরেজমিনে। ইট ভাটা মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়লার দাম বাড়তি থাকায় লাকড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩তে বলা হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, ভার্টিক্যাল শফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরোপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। তাছাড়া আবাসিক, জনবসতি,সংরক্ষিত এলাকার বনভূমি ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র,জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা চালু করা যাবে না। আর এ আইন অমান্য করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আর এসব ইটভাটা তদারকি করার জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বন বিভাগ,স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু তাদের রহস্যজনক নীরবতার কারণে বাকেরগঞ্জ উপজেলায় অধিকাংশ ইটভাটা মালিক এসব আইনের তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের পরিচালক মো: আবদুল হালিম জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী জেলা উপজেলার অবৈধ ইট ভাটার তালিকা জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া হয়েছে। তাহারা অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলে আমরা তাদের সাথে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল জানান, শীঘ্রই অবৈধ ইটভাটা চিহ্নিত করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে।