প্রিন্স আরিফ খান, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি: মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের দু’পাশে চলমান উচ্ছেদ অভিযান থেকে আপাতত রক্ষা পেয়েছে গাংনীর জেলা পরিষদ মার্কেট। তবে গাংনী বাজারের শুক্রবারের (০৩ মার্চ) উচ্ছেদ অভিযান বেশ বিতর্কিত হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নেক নজরে অনেকের স্থাপনার অংশ বিশেষ রক্ষা পেয়েছে। ফলে পক্ষপাতিত্বের ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।
অপরদিকে এ উচ্ছেদ অভিযানে পথে বসেছেন কয়েকশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যাদের ব্যবসা করার মতো কোন জায়গা নেই গাংনী বাজারে।
জানা গেছে, গাংনী বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মেহেরপুর জেলা পরিষদ মার্কেট ভাঙার জন্য লাল কালি দিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সীমানা চিহ্নিত করলেও আইনের মধ্যে তা সম্ভব হয়নি। মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দৃঢ় ভুমিকায় অবশেষে এ মার্কেট রক্ষা পেয়েছে উচ্ছেদ হওয়া থেকে। ফলে স্বস্তি ফিরে এসেছে ব্যবসায়ীদের মাঝে। যারা বৃহস্পতিবার রাতে মালামাল সরিয়ে নিতে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন।
জানা গেছে, আরএস রেকর্ড অনুযায়ী গাংনীর জেলা পরিষদের মার্কেট ভবনের মালিকানা মেহেরপুর জেলা পরিষদের। রেকর্ডমূলে জেলা পরিষদ খাজনা পরিশোধ করে আসছে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ যদি রাস্তা প্রশস্থকরণের প্রয়োজনে এ জায়গা নিতে চায় তাহলে আইনের মধ্যেই নিতে হবে। পূর্বের কোন ম্যাপ ধরে লাল দাগ চিহ্নিত করলেই ভাঙা যায় না বলে সতর্ক করেছেন মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুস সালাম। তার দৃঢ় অবস্থানের কারনেই গতকাল শুক্রবার গাংনী বাজারের অবৈধ স্থাপনা অভিযান থেকে বাদ পড়েছে জেলা পরিষদ মার্কেট ভবন। তবে সরকারি উন্নয়ন প্রয়োজনে যদি জায়গা ছেড়ে দিতে হয় তাহলে জেলা পরিষদ নিয়মের মধ্যেই তা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত বলেও জানিছেন আব্দুস সালাম।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে তৃতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ। আগের দিন পর্যন্ত উচ্ছেদ করা স্থাপনের কাছ থেকে হাসপাতালের সামনে গতকাল আবারও উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। যা পর্যায়ক্রমে গাংনী বাস স্ট্যান্ড এলাকায় পৌছায়। গাংনী হাসপাতাল বাজার থেকে গাংনী বাজার পর্যন্ত স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে আগের দু’দিনের অনড় অবস্থা থেকে সরে আসেন অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। কিছু কিছু স্থাপনার লাল দাগ চিহ্নিত অংশ বিশেষ ভেঙ্গে দিলেও অনেকের স্থাপনার একই অংশ বিশেষে হাত দেওয়া হয়নি। এমন অভিযোগ করে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদও জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী।
জানা গেছে, ১ মার্চ মেহেরপুর পুরাতন বাস স্ট্যান্ড থেকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের দুপাশে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রথম ও দ্বিতীয় দিন অভিযান দল সীমানা সংক্রান্ত বিষয়ে অনড় ছিল ; সড়কের জায়গা এক ইঞ্চিও ছাড় দেওয়া হবে না এমন ছিল তাদের ঘোষণা। কিন্তু গতকাল গাংনী বাজারের অভিযান ছিল তার উল্টো। যা নিয়ে বিতর্কিত হচ্ছে গাংনীর বিভিন্ন মহলে।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছু ভবনের সামান্য অংশ সড়কের মধ্যে পড়েছে। যেখানে ভাঙার তেমন প্রয়োজনও ছিল না। কিন্তু সেখানে বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এতে পুরো ভবনটিই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আবার কিছু কিছু স্থাপনার বেশটুকু সড়কের লাল দাগের মধ্যে পড়েছে। অথচ সেখানে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদও করেছেন অনেকে। তবে কোন কিছুতেই কর্ণপাত না করে ইচ্ছেমাফিক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে গাংনী বাজার পেরিয়ে গেছে অভিযান দলটি। এমন অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। শনিবারের মধ্যে মেহেরপু জেলার পূর্ব দিকের শেষ সীমানা খলিশাকুন্ডি ব্রিজের পশ্চিম পাশ পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে গাংনী হাসপাতাল বাজার থেকে গাংনী বাজারের শেষ সীমানা পর্যন্ত রাস্তার দুপাশের অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেওয়ায় পথে বসতে চলেছেন কয়েশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার সময় যাদের অনেকেই চোখের পানি ফেলেছেন। তাদের দাবি ছিল আগামি ঈদের পরে উচ্ছেদ অভিযান হোক। যাতে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালভাবে তারা ইদ উদযাপন করতে পারেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, সড়ক সংস্কারে অনেক সময় ব্যয় হবে। অনেক সড়কের কাজ কিছু অংশ করে তারপরে দিনের পর দিন পড়ে থাকে। এ সড়কের কাজও হয়তো অনেক সময় ধরে পড়ে থাকতে পারে। তাহলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এক দেড় মাস সময় দিলে কি সমস্যা হতো ? এমন প্রশ্ন করেছেন এসব দরিদ্র ব্যবসায়ীরা।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।