লিটন মুন্ডা, চুনারুঘাট উপজেলা প্রতিনিধি:নারীর প্রতি সকল সহিংসতা বৈষম্য শোষন রুখো।চা শ্রমিকের ১৩ দফা পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে গত ৮ ই মার্চ রোজ বুধবার বার চুনারুঘাট উপজেলার বেগমখাঁন চা বাগানে একটি বর্ণ্যাঢ র্যালি অনুষ্টিত হয়। দুপুর ২ টায় বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠন এর আহবায়ক চা শ্রমিক নেত্রী – খাইরুন আক্তার এর সভাপতিত্বে এবং সুবল মালাকার এর সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন -সন্ধ্যা রানী ভৌমিক, নারী দিবস ইতিহাস তুলে ধরেন – রুমা কালিন্দী। ৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন – উপজেলা প্রশাসক – সিদ্ধার্থ ভূমিজ।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন – বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন বি -৭৭ এর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি নৃপেন পাল, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন – চুনারুঘাট উপজেলার আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি – মুজিবুর রহমান, মোঃ আনোয়ার হোসেন ( লিজন), শ্রীমঙ্গল উপজেলার সেচ্ছাসেবক লীগের কেশব বারই, রুমা উরাং।
আরও উপস্থিত ছিলেন – বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠন সদস্য সচিব চা শ্রমিকনেত্রী – সন্ধ্যা রানী ভৌমিক, মনোবল চা ছাত্র যুব সংগঠনের সভাপতি – রনি যাদব, বিষ্ণু হাজরা, ভূমি অধিকার ছাত্র যুব আন্দোলন এর সভাপতি – বিরেন্দ্র কালিন্দী, মূখেশ কর্মকার, রুমা কালিন্দী, বাংলাদেশ মুসলিম ছাত্র চা ফোরামের সভাপতি সফররাজ সাজু , সেক্রেটারী হাসানুজ্জামান হাসান, সংবাদকর্মী লিটন মুন্ডা, শান্ত মৃধা, শ্যামল গোয়ালা প্রমূখ।
বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের আহবায়ক – খাইরুন আক্তার ১৩ দফা দাবি গুলো উপস্থাপন করেন। ১৩ দফা দাবিগুলো হলোঃ-
১। প্রতিটি চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরী ৫০০ টাকা করতে হবে পাশাপাশি লিপ পাই অতিরিক্ত পাতা তোলার জন্য কেজি প্রতি চা শ্রমিককে ১০ টাকা করে দিতে হবে।
২। নারী চা শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস উন্নিত করতে হবে।
৩। প্রতিটি চা বাগানে কমিউনিটি ক্লিনিকে নারীদের জন্য বিনা মূল্যে স্যানিটারী প্যাড প্রদান করতে হবে।
৪। মাসিকের সময়কালীন পাহাড় বেয়ে পাতা তোলা নারীর শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই প্রতিমাসে মাসিকের সময়কালীন নারী চা শ্রমিককে ২ দিনের ছুটি দিতে হবে।
৫। প্রতিটি চা বাগানে প্রসূতি নারীর জন্য উন্নতমানের নিরাপদ ডেলিভারীর ব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় ঔষুধ ও টিকা বিনা মূল্যে সরবরাহ করতে হবে।
৬। গর্ভবর্তী মহিলাসহ যেকোনো রোগীকে হাসপাতালে আনা নেওয়ার জন্য প্রতিটি চা বাগানে নূন্যতম ১ টি এম্বুলেন্স থাকতে হবে।
৭। বর্ষাকালে চা বাগানে নারী শ্রমিকদের বৃষ্টির পানি মাথায় দিয়ে চা পাতা সংগ্রহ করতে হয়। সেজন্য প্রতিটি নারীকে ১টি করে রেইনকোট বরাদ্দ দিতে হবে।
৮। চা বাগানে নারী শ্রমিকদের মধ্যে জরায়ুমুখ নেমে যাওয়া রোগীটি ব্যাপক আকারে রয়েছে। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে নারীর জরায়ুমুখ নেমে আসে। তাই প্রতিটি সেকশনে নারী শ্রমিকদের জন্য ১ টি করে শৌচাগার এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। প্রতিটি চা বাগানে বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে কার্যক্রম পদক্ষেপ নিতে হবে।
১০। সকল বাগানে নারী সহ চা শ্রমিকদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
১১। প্রতিটি বাগানে নূন্যতম ১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
১২। ঘরে বাইরে যেকোন প্রকার নারী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই নারী/শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১৩। চা বাগানের শিক্ষিত নারীকে স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে ও দুপুরের খাবার বিরতির পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্টানের সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।