মোঃ যুবরাজ মৃধা পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি: পটুয়াখালী: পটুয়াখালীতে এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে এই জেলার তরমুজ।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তরমুজ বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় তাদের মুখে এবার হাসি ফুটেছে।বেলে-দোআঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় পটুয়াখালীতে তরমুজ চাষ ভালো হয়। মৌসুমি এই ফল নিয়ে তাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা।
প্রকারভেদে জাম্বু জাগুয়ার, বিগ ফ্যামিলি, সুইট ড্রাগন, সুগার বেবি ও ব্লাক ডায়মন্ড নামে ৫ ধরনের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এর মধ্যে কালচে রংয়ের জাম্বু জাগুয়ার তরমুজ স্বাদে অতুলনীয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তরমুজ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। আকার ভেদে প্রতিটি তরমুজ ১০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের তথ্যমতে, এ বছর পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা, বাউফল, কলাপাড়ায় প্রায় ৮ হাজার একর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। ফলন বিক্রি হবে প্রায় ২ শ’ কোটির মতো। চার মাসেই ফলন পাওয়া গেছে এ সকল উপজেলায়।
বাউফল, কলাপাড়া, গলাচিপা উপজেলার প্রায় ৭ হাজার কৃষক এ বছর তরমুজের আবাদ করেছেন। জানা যায়, বাউফলের কাছিপাড়া ইউনিয়ন এবং কলাপাড়ার ধানখালী, নীলগঞ্জ, বালিয়াতলি এবং চম্পাপুর, গলাচিপার আমখোলা ও আনন্দপাড়ায় সবচেয়ে বেশি তরমুজের আবাদ হয়েছে।
বালিয়াতলি এলাকার তরমুজ চাষি বালিয়াতলী এলাকার চাষি শাহাবুদ্দিন মুনসী বলেন, ‘আসলে তরমুজে লাভের টাকাটা ফরিয়ারাই খেয়ে ফেলে। আমাদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকায় ক্ষেত কিনে ঢাকাসহ অন্য এলাকায় নিয়ে সেই তরমুজ বিক্রি করে অন্তত ১০ লাখ টাকা। আমরা খালি খাইট্টাই গেলাম। তিন মাস আমরা শ্রম দিয়েছি, এখন ফলন পাইতেছি। কিন্তু লাভ কী হবে? ভালো দাম পাইতেছি না। আমরা ক্ষেতে যেই তরমুজ ২০-২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করি, তা তারা বাজারে নিয়ে ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি করে। তরমুজের স্থায়ী পাইকারি বাজার থাকলে হয়তো দরদাম করতে পারতাম।’
একই গ্রামের কৃষক খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমি দুই লাখ টাকা লোন ছাড়াইছি। আমার কোনো জমি নাই, ১০ টাহা সুদে দেড় লাখ টাকা কর্য নিয়া দুই কানি জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এখন যে জমিতে ওষুধ, সার দিমু তাতে লাগবে পঞ্চাশ হাজার টাহা; হেই টাহাডা পর্যন্ত নাই। আইজ আবার কর্য করতে লোক পাঠাইছি। এহোন খুব সমস্যায় আছি। তরমুজ বিক্রি করে এইসব দেনা পরিশোধ করমু। তয় আল্লায় দেলে ফলন ভালোই হইছে। এহনও বিক্রি করা শুরু করি নাই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান বছরে পটুয়াখালী জেলায় ২৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে আগাম তরমুজ সংগ্রহ ও বিক্রি শুরু হয়েছে। কয়েকদিন পরই রমজান শুরু হবে। তখন তরমুজের চাহিদাও বেশি থাকবে। কৃষক ভালো দামও পাবেন। আশা করি জেলায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি তরমুজ বিক্রি হবে। কৃষকরা বাজার যাচাই করে বিক্রি করলে ভালো দাম পাবেন। উৎপাদনের পাশপাশি কৃষিপণ্যের বাজার সম্পর্কেও কৃষকদের ধারণা রাখতে হবে।