আমিনুর রহমান, অভয়নগর (যশোর )প্রতিনিধি: অভয়নগরে সড়কের পাশে ১৪ বছর ধরে তালের বীজ রোপন করে চলেছেন চিত্তরঞ্জন দাস।তার এই মহতী উদ্যোগের কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম আবু নওশাদ পরিদর্শন করেছেন।গতকাল শুক্রবার সকাল ১০ টায় উপজেলার ধোপাদী ধোপাপাড়া টু গোবিন্দপুরের সড়কে চিত্ত রঞ্জন এর সাথে থেকে নিজ হাতে তালেরবীজ বপন করেন।এরপর তিনি চিত্তরঞ্জন দাসের হাতে লাগানো তালের গাছ দেখতে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, এই তালগাছ আমাদের অনেক উপকার করে। তালগাছ আমাদের ছায়া দেয়। বজ্রপাত ঠেকাতে অনেক সহযোগিতা করে।আমি চিত্তরঞ্জন দাসের এই উদ্যোগ স্বাগত জানাই। এক কথায় বলা যায় তালগাছ অনেক কাজে লাগে। পরিদর্শনকালে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মেম্বার ইকবাল হোসেন,সমাজসেবক হরে কৃষ্ণ, আইয়ুব খানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। জানা গেছে, ৫৫ হাজার তালের চারা রোপণ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলার ধোপাদী গ্রামের এক হতদরিদ্র কৃষক। দেশে বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে তালগাছ লাগানো নিয়ে সম্প্রতি বেশ আলোচনা হলেও ১৪ বছর আগে নীরবে-নিভৃতে এ কাজ শুরু করেছিলেন যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের মৃত শিশুবর দাসের ছেলে তালগাছ প্রেমী চিত্ত রঞ্জন দাস। অন্যদের ফেলা দেওয়া তালের বীজ সংগ্রহ করে নিজ খরচে এ পর্যন্ত ৫৫ হাজার তালের চারা লাগিয়েছেন তিনি। বিভিন্নভাবে এই বীজ নষ্ট হয়েছে, নষ্ট হয়েছে চারাও। এমনকি গাছও নষ্ট হয়েছে কিন্তু হাল ছাড়েননি চিত্ত রঞ্জন দাস। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালগাছ রোপণ ও তার রক্ষণাবেক্ষণ করেই তিনি পরম শান্তি পান বলে জানান।১৪ বছর আগে তার রোপণকৃত তালের গাছ এখন অভয়নগরের বিভিন্ন সড়কের দু’ধারে দৃশ্যমান। বজ্রনিরোধক পরিবেশ বান্ধব এ গাছের চারা রোপণ ও পরিচর্যা করে ইতিমধ্যে এলাকাবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন।ধোপাদী গ্রামের সড়কগুলোতে গেলে সারি সারি তালগাছ নজর কাড়বে যে কোন প্রকৃতিপ্রেমীর। ধোপাদী, বুইকারা, সরখোলার পথজুড়ে আছে চিত্ত রঞ্জনের লাগানো হাজার হাজার তালগাছ। চিত্ত রঞ্জন দাস জানান, এখন অসংখ্য তালগাছ আছে যেগুলো বড় হয়েছে কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেক গাছই বড় হতে পারেনি। গাছ একটু বড় হলেই অনেকে ডাল-পাতা ছেঁটে নিয়ে যায়।তালপাখা বানানোর জন্য একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি পাতা কেটে নিয়ে যায়। আমি একদিন থাকবো না কিন্তু এই তালের চারা আমার স্মৃতি বহন করবে শত শত বছর। মূলত তাল গাছের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকেই এ গাছ লাগিয়ে তার পরিচর্যা করে আসছি। একটি তালগাছ পরিপক্ব হতে মূলত ১৩/১৪ বছর সময় নেয়। এখন থেকে ধাপে ধাপে হয়তো অনেক গাছেই ফল আসবে। গাছের ছায়ায় ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নিবে, বজ্রপাত ঠেকাবে। এ বছর ২০ হাজার তালের বীজ কিনেছি।ধাপে ধাপে বীজগুলো লাগানো হবে। ধোপাদী গ্রামের আয়ুব খান জানান, আমরা বিলে ধান চাষাবাদ করি, ঘাস কেটে বাড়ির ফেরার পথে ক্লান্ত হয়ে পড়লে চিত্ত রঞ্জনের লাগানো তালগাছের নিচে বসে বিশ্রাম করি। হরেকৃষ্ণ জানান, সড়কের পাশ ধরে সারি সারি তালগাছ দেখে সত্যি অনেক ভালো লাগে। এসময় দরিদ্র কৃষক চিত্ত রঞ্জনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান অনেকে। পরিবেশ বন্ধু চিত্ত রঞ্জনের কৃত্তি এলাকাবাসীর নজর কাড়লেও সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এখনো পাননি নূন্যতম কোন স্বীকৃতি। তালের চারা সংরক্ষণ ও পরিচর্যায় সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি ভালো কাজের স্বীকৃতি চান এলাকাবাসী। সিরাজ শেখ জানান, চিত্ত রঞ্জন দাস নিজ উদ্যোগে অভয়নগরের বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য তালের চারা রোপণ করেছেন, যা এখন দৃশ্যমান। ভবিষ্যতে এ তাল গাছ গুলো দেশের সম্পদ হয়ে ।