মো: শান্ত শেখ, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাঘিয়ার নদীতে ব্রিজের ভায়াডাক্ট (সিরিজ সেতু) নির্মাণের কাজ। গত কয়েকবছর ধরে কাজটি চললেও অর্ধেক কাজ শেষ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ভায়াডাক্ট নির্মাণে অনিয়ম আর ধীরগতি বর্তমানে জনগণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, টুঙ্গিপাড়া এলজিইডির প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ পছন্দের ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজটি করছেন। কাজের প্রাক্কলন মোতাবেক লোহার পাইপ ও স্টিল সাটারিং (স্টিল সিট) ব্যবহার করে ঢালাই করার বিধান থাকলেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে গাছের চিকন বল্লি এবং কাঠের তক্তা ব্যবহার করে ভায়াডাক্টের কংক্রিট ঢালাই কাজ করছেন। এমনি ডায়াডাক্টের পাইলের লোড টেস্ট না করেই পাইলক্যাপ নির্মাণ করা হয়। স্থানীয়রা নিষেধ করা সত্ত্বেও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সামাদের সহযোগিতায় এমন কাজ করেছে ঠিকাদার। এমনকি এলাকাবাসী কাজের ইস্টিমেট দেখতে চাইলে তাদের কথায় কর্ণপাত না করে তিনি দেন কঠোর হুমকি।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে টুঙ্গিপাড়া এলজিইডির প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদের কাছে তথ্য জানতে চাইলে তথ্য না দিয়ে শুরু করেন তালবাহানা। এছাড়া ভায়াডাক্টের কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজে গাছের বল্লি ব্যবহার ও পাইলের লোড টেস্ট করা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও কোনো বক্তব্য দিতে রাজি নন তিনি।
তবে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ হতে টুঙ্গিপাড়া হেডকোয়ার্টার সড়কে ৩০০ মিটার ভায়াডাক্ট (সিরিজ সেতু) নির্মাণের কাজ করছে ফরিদপুরের মেসার্স জান্নাত কন্সট্রাকশন।
এদিকে গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে ফোন করে ও হোয়াটসঅ্যাপে তথ্য চাইলেও তিনিও দেননি কোনো তথ্য।
ডুমুরিয়ার স্থানীয় ইউপি সদস্য খোকন তালুকদার বলেন, কাজের প্রাক্কলন অনুযায়ী লোহার পাইপ ও স্টিল সাটারিং ব্যবহার করার কথা। কিন্তু সেটা ব্যবহার না করে গাছের বল্লি ও কাঠ দিয়ে সাটারিং করে ডায়াডাক্টের কংক্রিট ঢালাই দেয়া হচ্ছে। এতে কলামের স্লাপ সবদিকে সমান হয় না। এছাড়া পাইলের লোড টেস্ট না করেই মন মতো কাজ করে যাচ্ছে। কিছু বলতে গেলেই হুমকি পেতে হচ্ছে। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে তারা অনিয়ম আর ধীরগতিতে কাজ করে চলেছেন।
ডুমুরিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা সঙ্কর বিশ্বাস, নৃপেন বৈরাগী, অতুল বিশ্বাসসহ আরও অনেকে বলেন, আর কতদিন ধরে এই কাজ চলবে তাই বুঝি না। সেই কবে থেকে দেখছি কাজ চলছে কিন্তু শেষ আর হয় না। এতে দিন দিন মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। রাস্তায় দেয়া কলামের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাও ঘটছে। তাই আমাদের দাবি ব্রিজের কাজটি দ্রুত সমাপ্ত হোক।
এসব বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ কোনো বক্তব্য ও তথ্য দিতে রাজি না হলেও কিছুটা মুখ খুলেছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ। তিনি মুঠোফোনে জানান, ঠিকাদারি কর্তৃপক্ষ গাছের বল্লি ও কাঠ দিয়ে সাটারিং করে ভায়াডাক্টের কংক্রিট ঢালাই দিচ্ছে বিষয়টি জানতে পেরে আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলেছি লোহার পাইপ দিয়ে কাজ করার জন্য। লোড টেস্ট না করে ও ভায়াডাক্টের অর্ধেক কাজ এভাবে করার পরও কেন বাধা দেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এ বিষয়ে ঠিকাদার হাবিবুর রহমান হাবিবকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে-বার্তা দিয়েও কোন সারা মেলেনি।
তবে ওই কাজের শ্রমিক সর্দার সিদ্দিক হোসেন বলেন, লোহার পাইপ ও স্টিল সাটারিং ছাড়া কাজ করা যাবে না। তাই লোহার পাইপ ও স্টিল সাটারিং কিনতে পাঠিয়েছি। প্রায় অর্ধেক কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পাইপ আনার পর বাকি কাজ শুরু হবে। আর কিছু জানার থাকলে ঠিকাদারের নাম্বারে কল করে জানতে পারেন।
জান্নাত কন্সট্রাকশনের ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম রনি মুঠোফোনে জানান, গাছের বল্লি দিয়ে কাজ করা যাবে না বলে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কাজটি সম্পন্ন করতে ১০০-১৫০ লোহার পাইপ প্রয়োজন। এগুলো কিনতে ১০-১৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। আমাদের আর্থিক অবস্থা একটু খারাপ দেখায় তাই বর্তমানে কাজটি বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া অনিয়মের নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এহসানুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেতুর সম্পর্কে তথ্য চাইলেও তিনি এ বিষয়ে কোন তথ্য দেন নি।