1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : বরিশাল ব্যুরো প্রধান : বরিশাল ব্যুরো প্রধান
  3. [email protected] : cmlbru :
  4. [email protected] : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান
  5. [email protected] : ঢাকা ব্যুরো প্রধান : ঢাকা ব্যুরো প্রধান
  6. [email protected] : স্টাফ রিপোর্টারঃ : স্টাফ রিপোর্টারঃ
  7. [email protected] : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান
  8. [email protected] : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান
  9. [email protected] : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান
  10. [email protected] : আমজাদ হোসেন রাজশাহী ব্যুরো প্রধান : রাজশাহী ব্যুরো প্রধান
  11. [email protected] : রংপুর ব্যুরো প্রধান : রংপুর ব্যুরো প্রধান
  12. [email protected] : রুবেল আহমেদ : রুবেল আহমেদ
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন

সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন ইহসান (দয়া)

লেখক: মো: মাহে আলম আখন প্রভাষক,নুরুন্নবী চৌধুরী মহাবিদ্যালয়  লালমোহন, ভোলা
  • আপডেট : রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
মো:মাহে আলম আখন : ইহসান শব্দটি আরবি ভাষা হতে এসেছে যার অর্থ দয়া করা,উত্তম আচরণ করা বা সৌজন্যমূলক আচরণ করা। সৃষ্টিকর্তার বান্দা হিসেবে মহান স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি উত্তম আচরনই হলো ইহসান।
ইহসানকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:- ১. স্রষ্টার প্রতি ইহসান ২. সৃষ্টির তথা সমগ্রহ মাখলুকের প্রতি ইহসান।
১. স্রষ্টার প্রতি ইহসান : আল্লাহ তায়ালা মানুষকে উত্তম আকৃতি দিয়ে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে শুধু তাঁরই এবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা যারিয়াত এর ৫৬ নং আয়াতে বলেন,” আমি জিন ও মানুষকে একমাত্র আমারই এবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি”।
মানব হিসেবে একাগ্রহ চিত্তে মহান আল্লাহ পাকের এবাদত বা দাসত্ব করাই হলো স্রষ্টার প্রতি ইহসান। ভিন্নভাবে বলা যায়,সকলক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার হুকুম পালন করাই হলো স্রষ্টার প্রতি ইহসান।
২. সৃষ্টির প্রতি ইহসান : সৃষ্টি জগতের সকল সৃষ্টির সাথে সুন্দর আচরণই হলো সৃষ্টির প্রতি ইহসান।
সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের অনেক দায়িত্ব কর্তব্য আছে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,” আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ ও দয়া প্রদর্শনকারীদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ ও দয়া বর্ষণ করেন। সুতরাং তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো, তাহলে আকাশের মালিক তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করবেন”।
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা) আরো বলেছেন,” সমগ্রহ সৃষ্টি আল্লাহর পরিজন। সুতারং আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ওই ব্যক্তি, যে তাঁর পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ করে”।
ইহসান করার উপায় :
বিভিন্নভাবে স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি ইহসান করা যায়। যেমন:
আল্লাহর প্রতি ইহসান: আল্লাহ পাক বান্দাকে তাঁর এবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাঁর যথাযথ এবাদত করাই স্রষ্ট্রার প্রতি ইহসান।আল্লাহ জ্বিন-ইনসানকে অযথা সৃষ্টি করেন নাই। পানাহার, খেলাধুলা ও হাসি-তামাশা করার জন্য সৃষ্টি করেন নাই। বরং তাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার জন্য। তারা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে, তাঁরই মহত্ব গাইবে এবং তাঁরই আনুগত্য করবে। তাঁর নির্দেশসমূহ মানবে এবং নিষেধসমূহ ত্যাগ করবে। তাঁর দেয়া সীমারেখা লঙ্ঘন করবে না। আর অন্য সবার ইবাদত ত্যাগ করবে। যেমন: আল্লাহ তা‘য়ালা এরশাদ করেন,
‘‘আমি জ্বিন ও ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’’
সৃষ্টির প্রতি ইহসান: সৃষ্টির প্রতি ইহসান করার অনেক মাধ্যম রয়েছে।যেমন:-
পিতা- মাতার সাথে ইহসান: পিতা- মাতার সাথে ভাল ব্যবহার,তাদের সেবা করা, তাদের ভরনপোষণ দেওয়ার মাধ্যমে ইহসান করা যায়।আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, “আর তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ‘ইবাদত না করতে এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ্’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; আর তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো। আর মমতাবেশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করো এবং বলো, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর, যেভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন”।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ ( রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম: আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? জবাবে তিনি বললেন: সময় মত সালাত আদায় করা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম: তারপর কোনটি? তিনি বললেন: পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম: তারপর কোনটি? তিনি বললেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।
আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখা : আত্মীয় স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার, সুখে – দু:খে তাদের পাশে থাকা ও তাদের খোঁজ খবরের মাধ্যমে ইহসান করা যায়। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, আল্লাহ আত্মীয়তাকে সৃষ্টি করলেন; অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমার বন্ধন যে রক্ষা করে, তার বন্ধন আমি রক্ষা করি: যে ছিন্ন করে, আমি তার বন্ধন ছিন্ন করি। (বোখারি, মুসলিম)।
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, রেহেম হতে রহমের (দয়ার) উৎপত্তি। আল্লাহ বলেছেন, ‘যে তোমার বন্ধন রক্ষা করে, আমিও তার বন্ধন রক্ষা করি এবং যে তোমার বন্ধন ছিন্ন করে, আমি বন্ধন ছিন্ন করি।’ (বোখারি)
ঋনগ্রস্থকে ঋণ পরিশোধে সহযোগিতা করা: জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এমন ব্যক্তির জানাজা পড়তেন না, যিনি ঋণ রেখে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং পরিশোধের কোনো ব্যবস্থা রেখে যাননি। একবার এমন এক ব্যক্তির জানাজা উপস্থিত হলো। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করেন, তার কোনো ঋণ আছে কি? লোকেরা বলল, জি, দুই দিনার। অন্য বর্ণনা মতে, ১৮ দিরহাম।
রাসুল (সা.) বলেন, পরিশোধের কোনো ব্যবস্থা রেখে গেছে কি? জবাব এলো, না। রাসুল (সা.) বলেন, এমন ব্যক্তির জানাজা আমি পড়ব না; তোমরা পড়ো। সাহাবায়ে কেরাম হতাশ হলেন। বেশি হতাশ হলেন আবু কাতাদাহ (রা.)। মৃত ব্যক্তির পুরো ঋণের জিম্মাদারি নিজেই নিয়ে নিলেন এবং রাসুল (সা.)-এর কাছে গিয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমিই তার ঋণের পূর্ণ জিম্মাদারি নিলাম। আপনি তার জানাজা পড়িয়ে দিন। অতঃপর রাসুল (সা.) জানাজা পড়লেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ঋণী ব্যক্তি পরকালে তার ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৪১৫৯, ২২৬৫৭)
উল্লেখ্য, ঋণী ব্যক্তির জানাজা না পড়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ছিল। যখন আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে (খাইবার বিজয়ের মাধ্যমে) আর্থিক সচ্ছলতা দান করেন, তখন থেকে জানাজা পড়তেন এবং ঋণ নিজের জিম্মায় নিয়ে নিতেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তা পরিশোধ করতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৪১৫৯)
রোগীর সেবা করা: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন ‘এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের পাঁচটি অধিকার রয়েছে ১. সালামের জবাব দেয়া, ২. হাঁচির উত্তর দেয়া, ৩. দাওয়াত কবুল করা, ৪. অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া ও ৫. জানাজায় অংশগ্রহণ করা’ ( বুখারি ১২৪০, মুসলিম ২১৬২)।
অপর বর্ণনায় হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন মহান রাব্বুল আলামিন আদম সন্তানকে সম্বোধন করে বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি। বান্দা বলবে, আপনি তো বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আমি আপনাকে কীভাবে দেখতে যেতে পারি? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। তুমি তাকে দেখতে গেলে তার কাছে আমাকে পেতে’ (মুসলিম ২৫৬৯)।
প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরণ করা: আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তোমরা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী ও দুর-প্রতিবেশীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো।” আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:“জিব্রাঈল আ. এসে আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অবিরত উপদেশ দিতে থাকলেন; এমনকি আমার মনে হল, হয়ত তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিশ বানিয়ে দিবেন।
ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেওয়া: হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে। -সহিহ বোখারী
এতিমকে সাহায্য করা: হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো এতিমকে নিজের মা-বাবার সঙ্গে নিজেদের (পারিবারিক) খাবারের আয়োজনে বসায় এবং (তাকে এ পরিমাণ আহার্য দেয় যে) সে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করে, তাহলে তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
অন্ধকে পথ চলতে সাহায্য করা: পথ চলার ক্ষেত্রে অন্ধ ব্যক্তির ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কখনও তাকে হাত ধরে তার সাথে চলে তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা। এটা একটি বড় শিষ্টাচার। যার প্রতি ইসলাম উৎসাহিত করেছে। পক্ষান্তরে অন্ধকে ভুল পথ প্রদর্শন করা হ’তে ইসলাম সাবধান করেছে এবং একে অভিশাপে পতিত হওয়ার কারণ বলে আখ্যায়িত করেছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ করেন যে অন্ধকে ভুল পথ দেখায়’
বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দেওয়া:
ভাই বোনের মাঝে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
ছোটদের স্নেহ করা,বড়দের শ্রদ্ধা করা।
পরিবারের সকলের প্রতি সদাচার করা,
সকল সৃষ্টির প্রতি ইহসান: পশু- পাখি, গাছ – পালা, নদ- নদী, পাহাড়- বর্বত, জীবজন্তু এবং সৃষ্টিকুলের সকল সৃষ্টির সংরক্ষণ ও পরিচর্যা করা। অকারণে তাদেরকে কষ্ট, হত্যা ও নির্মূল না করা, ইত্যাদি।
ইহসানের উপকারিতা: ইহসান করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম হলো, ইহসানকারী ইহসান করার দ্বারা শুধু অন্যের উপকারই করে না, এতে তার নিজেরও উপকার হয়। কারণ তিনি কারো প্রতি ইহসান করলে আল্লাহ তার প্রতি ইহসান করেন এবং অন্যরাও তার প্রতি ইহসান করেন। এভাবেই অন্যের প্রতি ইহসান করার মাধ্যমে মূলত নিজের প্রতিই ইহসান করা হয়। আল্লাহ তায়ালা ইহসানকারীকে ভালোবাসেন এবং ইহসানের মাধ্যমে জান্নাতের পথ সুগম হয়।আল্লাহর পাক আমাদেরকে অছিলা ( মাধ্যম) তালাশ করতে বলেছেন আর ইহসান করাও এক প্রকার অছিলা। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইহসান খুবই প্রয়োজন।
লেখক: মো: মাহে আলম আখন
প্রভাষক,নুরুন্নবী চৌধুরী মহাবিদ্যালয়
লালমোহন, ভোলা
Facebook Comments
no views

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২২ দৈনিক শিরোমনি