ক্যাপ্টেন রেদওয়ান সিকদার: সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পে ২৭.৫% আয়কর ও সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং ফেডারেশনের মহাসচিব মাস্টার মেরিনার ক্যাপ্টেন রেদওয়ান সিকদার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সমুদ্রগামী জাহাজ পরিবহন শিল্পে ২০৩০ সাল পর্যন্ত আয়কর ছাড়ের সুবিধা প্রত্যাহারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে তিনি বলেন; সম্প্রতি এক এসআরও জারির মাধ্যমে এ সুবিধা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে শিল্পটিতে আয়কর দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৭ শতাংশে। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর জারি করা আরেক আদেশে শিল্পটিতে সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক আরোপের ঘোষণা দেয়া হয়। বিষয়টিকে সমুদ্রগামী জাহাজ ব্যবসা বিকাশের অন্তরায়। জাহাজ শিল্প খাতটির বিকাশ হয়েছে কর সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে। এ ব্যবসায় যুক্ত হয়ে উৎপাদনমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে যুক্ত বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলো নিজেদের সক্ষমতাও বাড়িয়ে তুলেছে। কিন্তু হঠাৎ করে বিদ্যমান কর সুবিধা বাতিলের পাশাপাশি নতুন করে মূসক আরোপ দেশের সমুদ্রগামী জাহাজ ব্যবসা পরিচালনায় স্থানীয় উদ্যোগগুলোকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্য পরিবহন বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের বড় ধরনের সুযোগকেও হাতছাড়া করবে বলে দাবি করছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং ফেডারেশন। সমুদ্রগামী জাহাজ সংশ্লিষ্টদের এ সংগঠনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বন্দরে বছরে পাঁচ হাজার জাহাজের আগমন হয়। যেখানে জাহাজ ভাড়া হিসেবে গড়ে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ব্যয় হয়। বিশেষ করে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনে অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে জাহাজে পণ্য পরিবহনের ব্যয় ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। সমুদ্রগামী জাহাজ মালিকানায় স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মালিকানা খুব ছোট পরিসরে হওয়ায় জাহাজ ভাড়ার প্রায় পুরোটাই মূলত দেশের বাইরে চলে যায়। করছাড়ের সঙ্গে সরকারি প্রণোদনা এবং দেশী জাহাজে পণ্য পরিবহনে বাড়তি সুবিধা দেয়ার সুযোগ ফলে গত অর্থবছরে স্থানীয় জাহাজ মালিকদের মাধ্যমে ৭৬০ মিলিয়ন ডলার জাহাজ ভাড়া ও আড়াই হাজার নাবিকের বেতনসহ প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার যদি সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দুটি পুনর্বিবেচনা না করে, তাহলে বিপুল সম্ভাবনাময় জাহাজ শিল্পের অগ্রগতি ব্যাপক মাত্রায় বাধার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিবৃতিতে মাস্টার মেরিনার ক্যাপ্টেন রেদওয়ান সিকদার আরও বলেন, দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য পরিচালনায় বৈদেশিক মুদ্রার বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে পণ্যের জাহাজীকরণে। দেশে আমদানি-রফতানির যে ভলিউম তাতে দেশের সমুদ্রবন্দরে বছরে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার জাহাজ আসে। আর এসব জাহাজের ভাড়া বাবদ বছরে গড়ে ১২ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে বিদেশী জাহাজ মালিকদের হাতে চলে যাচ্ছে শুধু স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ততা কম হওয়ার কারণে। এ খাতে প্রণোদনা পেয়ে আমরা যখন বিনিয়োগ করতে শুরু করলাম, তাতে এখন জাহাজ ভাড়া ও নাবিকের বেতনাদি মিলিয়ে অন্তত দেড় বিলিয়ন ডলার আয় সম্ভব হয়েছে। সামনে আরো বিনিয়োগের যে পরিকল্পনা, তাতে জাহাজ ভাড়া বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা দিনে দিনে আরো সাশ্রয় হয়ে আয় বাড়ার কথা। যদিও সে সম্ভবনার জায়গাটুকু এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। সর্বশেষ আদেশ দুটির কারণে বিপুল সম্ভাবনাময় সমুদ্রগামী জাহাজ পরিবহন শিল্পের অগ্রগতির যে ধারা তৈরি হয়েছিল তা প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হতে চলেছে। এমন পদক্ষেপে সমুদ্রগামী জাহাজের নতুন বিনিয়োগ যেমন নিরুৎসাহিত হবে, আবার যারা এরই মধ্যে বড় বিনিয়োগ করে ফেলেছে তারাও একটা বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গেছে। সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে । চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে ; পণ্যবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ১০১-এ উন্নীত হলেও একেবারেই অপ্রতুল। সাগরে পণ্য পরিবহনে বিদেশী জাহাজ ভাড়া করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাই স্থানীয় উদ্যোক্তাদের এ খাতে বিনিয়োগের যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে, অর্থনীতির স্বার্থে তাই সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পে ২৭.৫% আয়কর ও সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার রাখাটা জরুরি।