শিক্ষার্থীদের বই প্রাপ্তি এবং পড়ালেখা নিশ্চিন্তে হোকঃ-
জি. এম আরিফ
এক্যাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছর প্রায় শেষ, শুরু হতে যাচ্ছে নতুন বছর। প্রতি বছরই বছরের শুরুতে তথা ১লা জানুয়ারীতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়, পালন করা হয় বই উৎসব। এবারের করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ছুটির মধ্যে বা বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এই অনিশ্চয়তা দূর করতে বর্তমান সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে, ফলে আশা করা যায় ১লা জানুয়ারী বই উৎসব না হোক, শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাবে। আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বই বিতরণ উপলক্ষে অনেক ধরনের আয়োজন থাকতো এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করতো। এবার যেহেতু বই উৎসব সরাসরি হচ্ছে না, ভার্চুয়াল মাধ্যমে নতুন বছর শুরু হওয়ার আগের দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভ উদ্ভোধন ঘোষণা করবেন এবং ১লা জানুয়ারী শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসব পালন করবে বলে শিক্ষামন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।
বই প্রাপ্তি থেকে যাতে কোন শিক্ষার্থী বাদ না যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আবার এটাও যাতে কেউ বলতে না পারে যে, বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা বই হাতে পায়নি বা সরকার যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারেনি। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের এনে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী বই বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিশ্চিত করতে হবে একজন শিক্ষার্থীও যাতে বই প্রাপ্তি থেকে বাদ না যায়।
বছরের শুরু থেকে প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে পারে এবং নতুন শ্রেনির নতুন বই নিরাপদে ঘরে বসে পড়তে পারে এর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা অফিস মিলে শিক্ষকদের সমন্বয়ে গাইডলাইন তৈরী করা। নতুন বছরে সময়-সুযোগ বুঝে সিলেবাস অনুযায়ী ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন পাঠ বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় চালু রেখে পড়ালেখা অব্যাহত রাখা। পড়ালেখা হোক আনন্দময় নতুন বছরের নতুন কিছু শিখার বা জানার জন্য। কোমলমতি শিশুরা যাতে কোনভাবেই কভিড-১৯ এ আক্রান্ত না হয় সে দিকে খেয়াল রেখে বই সরবরাহ বা পড়ালেখা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে হবে এবং শিক্ষার্থীরা যাতে ঘরের বাইরে সময় না কাটায় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।
করোনাকালীন এই সময়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী শিক্ষা অফিস থেকে বই এনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই কিভাবে বন্টন করা হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি তার এরিয়ার প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে সহজেই বই পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এ পর্যন্ত ২৫ কোটি বই উপজেলা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত পৌঁছেছে, তার মধ্যে মাধ্যমিকের ১৫ কোটি এবং প্রাথমিকের ৮ কোটি। এবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, সাদ্রি, গারো ও ত্রিপুরা) ৯৪ হাজারের বেশি শিশুকে নিজ ভাষায় পাঠ্য বই এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল বই দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।(সূত্রঃ NCTB বই বিতরণ নিয়ন্ত্রক)
আমরা এটাও জানি যে, এই বছর পরিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী-পরিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক, অভিভাবকসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। পরবর্তীতে সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এক শ্রেনি থেকে পরবর্তী শ্রেনিতে অটো প্রমোশন এবং এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরিক্ষার্থীদের অটো পাশের মাধ্যমে ১০০ ভাগ পাশ ঘোষণা করে। একটি শিক্ষাবর্ষ শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে যেনতেনভাবে হারিয়ে গেছে, পরবর্তী বছরও যেনতেনভাবে হারিয়ে না যায় সেই খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে যাতে পরিক্ষা নিয়ে কোন সংশয় না থাকে বা অটোপাশের চিন্তা মাথায় না আসে, সেজন্য বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে বা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
আবার বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে পড়ালেখায় মনোযোগী হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে নতুবা বই গুছিয়ে রেখে আগের মত অটোপাশের চিন্তায় থাকবে বা বেড়ানোর চিন্তায় থাকবে। শিক্ষার্থীরা যাতে বইমুখী হয় সেজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মোতাবেক অনলাইন ক্লাস বা হোমওয়ার্ক এ নিয়োজিত রাখার মাধ্যমে বইয়ের সাথে যুক্ত রাখা এবং নির্দিষ্ট সময়ে মূল্যায়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে বইয়ের পুরো বিষয়টা টাচে রাখে সেজন্য চ্যাপ্টার ওয়াইজ বা সিলেবাস অনুযায়ী পড়ানো বা সে অনুযায়ী পাঠ তৈরি করে সংসদ টিভি বা অনলাইন স্কুল পেইজে প্রচারের বা দেখার ব্যবস্থা করা।
আবার করোনা পরিস্থিতির যদি উন্নতি না হয় তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরো বাড়তে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়লেখা নতুন করে ব্যাঘাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে করণীয় এখনই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্ধারণ করতে হবে নতুবা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানির শিকার হতে হবে। এই বছর শেষ মূহুর্তে যেমন শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনাগ্রহে তা সফলতার মুখ দেখেনি। দেখা গেছে যে, শিক্ষার্থীরা অন্যজনের অ্যাসাইনমেন্ট হুবহু কপি করে জমা দিয়েছে। মোটকথা এভাবে একজন শিক্ষার্থীর শিখনফল মোটেই অর্জিত হয়নি।
পরিশেষে আমরা আশা করবো যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঠিক পদক্ষেপে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পাবে এবং নতুন শ্রেনির নতুন বইয়ে নতুন বছরে পড়ালেখা নতুন উদ্যমে শুরু হবে। করোনাকালীন এই সময়েও নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা যাতে সুন্দরভাবে চালিয়ে যেতে পারে তার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
ফুলগাজী, ফেনী