রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারার কমিটির শুরু থেকেই চলছে সমন্বয়হীনতা যারফলে রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগে হযবরল অবস্থা। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সসাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারার অসহযোগীতার কারন উলেক্ষ্য করে।
শেষ পর্যন্ত নতুন করে এককভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছেন কেন্দ্রে। সভাপতির জমা দেয়া কমিটিতে আগের প্রস্তাবিত ৩৩ পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে সৃষ্ট মতবিরোধ নিরসনের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর গত সপ্তাহে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামালের কাছে এ কমিটি জমা দিয়েছেন সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ।
গত ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলরদের মতামত ছাড়াই মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহকে সভাপতি ও কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হলেও গত এক বছরেও তা করতে পারেননি নেতারা। মূলত দলের বিভিন্ন পদে জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা হাইব্রিডদের পদায়ন নিয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহর বিরোধের সৃষ্টি হয়।
এদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গত ১৫ নভেম্বর কেন্দ্রে অনুমোদনের জন্য জমা দিলেও প্রস্তাবিত এই কমিটির বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপির অনুপ্রবেশকারীদের পদায়ন এবং ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাদের বাদ দেয়ায় একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে দলের কেন্দ্রীয় দফতরে। ফলে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিটি অনুমোদন না দিয়ে ৫ সদস্যের একটি আপিল কমিটি গঠন করে জটিলতা নিরসনের নির্দেশ দেন। দলের পদে জামায়াত-বিএনপির হাইব্রিডদের রাখা নিয়ে সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে সভাপতি একমত হতে পারেননি। কেন্দ্রীয় নেতারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে একসঙ্গে বসে বিরোধ নিরসনের চেষ্টা করলেও সাধারণ সম্পাদক বরাবরই অনুপস্থিত থাকায় কমিটি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানও হয়নি। আর এরই জেরে সভাপতি এককভাবে কমিটি করে কেন্দ্রে দিয়েছেন।
এবিষয়ে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মেরাজ মোল্লাহ বলেন, রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ অসহযোগীতার কারনে রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের ৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আগের প্রস্তাবিত ৩১ পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে সহসভাপতির মোট ১১ পদের মধ্যে বাদ পড়েছেন ৬ জন এবং নতুন ৬ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সভাপতির কমিটিতে সহসভাপতির পদে জায়গা পাওয়া নতুন ৬ জন হলেন প্রবীণ নেতা বদরুজ্জামান রবু মিয়া, আবদুল মজিদ সরদার, অ্যাডভোকেট জমসেদ আলী, মুক্তার হোসেন ও সাইফুল ইসলাম।
সভাপতির কমিটিতে সম্পাদকমণ্ডলীতেও বড় পরিবর্তন হয়েছে। তিনটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের মধ্যে আগের কমিটির একে আসাদুজ্জামানকে রেখে বাকি দুটি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সভাপতির কমিটিতে আহসানুল হক মাসুদ ও ফারুক হোসেন ডাবলুর নাম এসেছে। প্রচার সম্পাদক পদে এসেছেন মনিরুল ইসলাম বাবু। আগের কমিটির দফতর সম্পাদক পদে আসা প্রদ্যুৎ কুমার সরকারকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটিতে এসেছে শরিফুল ইসলামের নাম। উপদফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তারের বদলে এসেছে এসএম তৌহিদ আল হাসান তুহিনের নাম।
তুহিন রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও শিবিরের হামলার শিকার হয়েছিলেন বলে সুপারিশ নোটে উল্লেখ করা হয়েছে। আইন সম্পাদক এজাজুল হক মানুর বদলে এসেছেন অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াহার জেমস। ধর্ম সম্পাদক পদে এসেছেন পিনু মোল্লাহ। আগে ছিলেন এন্তাজ আলী। নাম। এছাড়া আরও কয়েকটি পদেও নতুন নাম এসেছে তবে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম হিরা বাচ্চুকে রাখা হয়েছে বলে জানান রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ।
এদিকে প্রবীণ ও ত্যাগী নেতা যাদের আগের প্রস্তাবিত কমিটিতে বাদ দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে রাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপিকা জিনাতুন নেসা তালুকদার, রায়হানুল হকসহ আরও সাতজনকে সদস্য করা হয়েছে প্রস্তাবিত নতুন কমিটিতে।
সভাপতি তার কমিটিতে পরিবর্তন প্রসঙ্গে সুপারিশ নোটে লিখেছেন, আগের প্রস্তাবিত কমিটিতে জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা হাইব্রিডদের বিভিন্ন পদে নাম দেয়া হয়েছিল জেলার কয়েকজন সংসদ সদস্য, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যদের সুপারিশ ও চাপে, যা নিয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এসব কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি রাজশাহীর কমিটি অনুমোদন থেকে বিরত থাকেন। ফলে তিনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত সাপেক্ষে নতুন করে ৭৫ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছেন। নতুন প্রস্তাবিত এ কমিটিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্যাগী নেতাকর্মীরাই জায়গা পেয়েছেন।
এককভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ বলেন, জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা হাইব্রিডদের কমিটিতে পদায়ন করতে চাই না। আমি যে কমিটি জমা দিয়েছি তাতে তৃণমূল ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আশা করি বঙ্গবন্ধুকন্যা ও দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার এ কমিটিকে অনুমোদন দেবেন। এতে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের সংগঠন আরও শক্তিশালী ও গতিশীল হবে বলে আমি মনে করি।
এব্যাপারে রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ এর সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে তিনি আমাকে বলেছেন পূর্বে যে কমিটির অনুমতির জন্য কেন্দ্রে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেটাই বহাল আছে নতুন কোনো কমিটির তালিকা পাঠানো হয়নি কেবা কাহারা মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে তিনি জানেনা